জাগো জবস

বিসিএস ক্যাডার হতে ধৈর্যশীল ও কৌশলী হতে হবে

ফারহান মাহমুদ ৩৮তম বিসিএসে রেলওয়ে (পরিবহন ও বাণিজ্যিক) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তার জন্ম চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানার দেওয়ানবাজারে। ফারহান তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। বাবা আবু জাফর মাহমুদ পেশায় ব্যবসায়ী এবং মা লতিফা সুলতানা গৃহিণী। তিনি ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম আইডিয়াল হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি রেলওয়ে প্রশিক্ষণ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—ফারহান মাহমুদ: ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা নিয়ে খুব একটা সিরিয়াস ছিলাম না, মাঝারি মানের রেজাল্ট হতো। এসএসসির আগে কিছুটা সিরিয়াস হই, ভালো ফলাফলও আসে, বোর্ড স্কলারশিপসহ এ প্লাস পাই। এরপর মহসিন কলেজে ভর্তি হই। কলেজের দিনগুলো খুব দ্রুতই চলে যায়। দিন শেষে পড়ালেখা সেই পরীক্ষার আগেই হয়। যথারীতি ভালো ফলাফল আসে এইচএসসিতেও। এসএসসির মতোই বোর্ড স্কলারশিপ পাই। ছোটবেলা থেকেই বেশ আড্ডাবাজ ছিলাম, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে কিছু জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলাম। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি কলোনীতে ছিন্নমূল শিশুদের জন্য একটা স্কুল দিয়েছিলাম। এলাকার কিছু মানুষ অবৈধ সুবিধা নিতে চেয়েছিল স্কুলের মাধ্যমে। সুবিধা না পেয়ে তারা স্কুলটি বন্ধ করে দেয়। ক্যারিয়ার ক্লাবের ডিপার্টমেন্ট জিএস ও বাঁধনের (রক্তদাতা সংগঠন) সদস্য ছিলাম।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?ফারহান মাহমুদ: পড়ালেখায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। কারণ বাবা ব্যবসায়ী হওয়ার ফলে পরিবার যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিল।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?ফারহান মাহমুদ: ভার্সিটিতে থাকাকালীন কমবেশি সব ছাত্রছাত্রীই কিছুটা কনফিউশনের মধ্যে থাকে—কোন সেক্টরে জব করবে। আমি যেহেতু ফিন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তাই স্বাভাবিকভাবেই টার্গেটেড সেক্টর ছিল ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর। আমি নিজে কী চাই—এটা বুঝতেই কিছুটা সময় চলে গিয়েছিল। পরে আশেপাশের সিনিয়রদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রাজুয়েশনের পর বিসিএসের প্রিপারেশন নিতে শুরু করি।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?ফারহান মাহমুদ: ৩৮তম বিসিএসে যোগদানের আগে আমি আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। একটি বেসরকারি আর একটি স্বায়ত্বশাসিত। তখনো আমি চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতাম। প্রিলির সময় ভালো প্রিপারেশন নিয়েছিলাম বলে রিটেনের প্রিপারেশন কিছুটা সহজ হয়েছিল। রিটেনে আমার ধারণা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদের থেকে কমার্স এবং আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদের বেশ ভালোই পরিশ্রম করতে হয়। বিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিতের অনেক টপিক আমাদের জন্য একেবারেই নতুন। তাই এ দুই বিষয়ে অন্য বিষয়ের থেকে বেশি সময় দিতে হয়েছিল। একেবারে সব কিছু ফেলে বছরের পর বছর চাকরির প্রিপারেশন নেওয়াটা আমি খুব একটা সাপোর্ট করি না। বেকার থাকলে পারিপার্শ্বিক বা সামাজিক চাপটা বেশ বাড়ে। তাই একবার ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কোথাও চাকরিতে প্রবেশ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?ফারহান মাহমুদ: আমার মেজো ভাই বিসিএসে (স্বাস্থ্য) কর্মরত। পরিবার থেকে এবং ভার্সিটির সিনিয়রদের থেকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই সর্বপ্রথম সৃষ্টিকর্তার প্রতি। পাশাপাশি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের। এছাড়া আমার অফিসের সহকর্মীরাও আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং সহায়তা করেছেন। তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জাগো নিউজ: নতুন যারা বিসিএসে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?ফারহান মাহমুদ: ৩৫তম থেকে ৪১তম বিসিএসের প্রশ্ন খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে, সিলেবাসের সঙ্গে রিলেটেড চ্যাপ্টারগুলো আগে বোর্ড বই থেকে এরপর বাজারের যে কোনো সিরিজের বই থেকে পড়ে নিতে হবে। পত্রিকা পড়তে হবে প্রতিদিন। পঠিত বিষয়গুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে, যেন পরীক্ষার হলে কনফিউশনে পড়তে না হয়। প্রিলির জন্য ভালোভাবে প্রিপারেশন নিলে তার সুফল রিটেনেও পাওয়া যায়। বিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিতের অনেক টপিক কমার্স এবং আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড স্টুডেন্টদের জন্য একেবারেই নতুন। তাই এগুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ভাইবার জন্য ফার্স্ট চয়েস যাই হোক না কেন, ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্টলি কথা বলার চর্চা করতে হবে। একসঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়া বন্ধুর সাথে দিনে ৩০ মিনিট হলেও ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করতে পারেন। সিভিল সার্ভিস বা যে কোনো ক্যাডারে কেন আসতে চান? ফার্স্ট চয়েসটি দেওয়ার কারণ, ফার্স্ট চয়েসের সঙ্গে যে বিষয়ের ওপর অনার্স সম্পন্ন করেছেন তার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, সরকারের মেগা প্রজেক্ট, বর্তমান সরকারের অর্জনসমূহ, বাজেট, আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহ, বিবিএ ও অনার্সে পঠিত বিষয় ইত্যাদি বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। একটি বিসিএসের নিয়োগ সম্পন্ন হতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই শুধু বিসিএসের পেছনে লেগে না থেকে অন্য চাকরির পরীক্ষাগুলোও দিতে হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?ফারহান মাহমুদ: জনগণকে সেবা দেওয়াই আমাদের কাজ। তাই জনগণ যেন তার সেবা নির্বিঘ্নে পেতে পারে; সেই লক্ষ্যে নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা থাকবে সব সময়। পাশাপাশি কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই।

এসইউ/এএসএম