জাগো জবস

সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় থেকেও বিসিএস ক্যাডার ফরহাদ

মো. ফরহাদ হোসেন ৩৭তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায়। বাবা আবুল হোসেন পেশায় কৃষক, মা পারভিন আক্তার গৃহিণী। ফরহাদ ২০০৯ সালে রায়পুর লুধূয়া এমএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১১ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি রায়পুর সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: শুরুতেই আপনার শৈশবের গল্প শুনতে চাই—ফরহাদ হোসেন: শৈশবে শান্তশিষ্ট ছিলাম। স্কুলের শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র ছিলাম। তখন বাংলাদেশ দলের ম্যাচ দেখার জন্যে টিফিন পিরিয়ডে শিক্ষকদের কাছে আবেদন করতাম। এভাবে ছুটি আদায় করা ছিল আমাদের জন্য চরম আনন্দের। বিকেল ৪টার পর স্কুল মাঠে কাউকে খেলতে দিতেন না। সবাই আমাকে খেলার জন্য ধরে রাখতেন। কারণ আমি খেললে প্রধান শিক্ষক খেলার জন্য মৌন সম্মতি দিতেন। যদিও আমি খেলায় মোটেও দক্ষ ছিলাম না। এভাবে হাসি-খুশির মধ্যদিয়ে জিপিএ ফাইভ নিয়ে এসএসসি পাস করি। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার জন্য ঢাকায় আসি। এটা ছিল জীবনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসা। পরে ঢাকা কমার্স কলেজে ভর্তি হই। এইচএসসিতেও জিপিএ ফাইভ পেয়েছিলাম।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?ফরহাদ হোসেন: প্রতিবন্ধকতা বলতে পড়াশোনায় কখনো কারো কাছ থেকে গাইডলাইন পাইনি। মাধ্যমিকে সায়েন্স বা কমার্স কোন বিভাগ নিয়ে পড়বো, কোনো ধারণা ছিল না। বড় ভাইয়েরা কমার্স নিয়ে পড়তেন। তাই আমিও কমার্স নিয়েছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?ফরহাদ হোসেন: ফেনী সার্কিট হাউজের পাশে আমার খালার বাড়ি। স্কুলে পড়াশোনার সময় খালার বাড়ি গেলে পরীর দীঘিতে ঘুরতে যেতাম। তখন ভাবতাম, সার্কিট হাউজ কত সুন্দর! এখানে কারা থাকেন? এসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেত। পরে জানতে পারলাম, বিসিএসে চাকরি পেলে এখানে থাকা যায়। যদিও তখন বিসিএসের কিছুই জানতাম না। মূলত স্বপ্নের বীজটা তখন থেকেই বুনতে শুরু করি। অ্যাপেয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে প্রথম ৩৭তমের বিসিএসে আবেদন করি।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?ফরহাদ হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে উঠে যাই। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ব্ল্যাড ডোনেশন, ভলান্টিয়ার, জেলা সমিতির অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। ভার্সিটির হলে উঠে জিয়া হল ডিবেটিং ক্লাব ও হল ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করি। নিয়মিত ডিবেট পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করতাম। ‘ইন্টার হল ডিবেট কম্পিটিশনে’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি একবার। ডিবেট করতে বিসিএসের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর বই দুটো নিয়মিত পড়া হতো। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও পোগ্রামে অংশগ্রহণ করতাম। ফলে আমার মধ্যে বিসিএস ইনফরমেশন গ্যাপটা কম ছিল। সবকিছু দ্রুত জানতে পারতাম। প্রচুর বই ও পেপার পড়া হতো। নিজ বিভাগের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলা, মঞ্চনাটক ও যে কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বাদ যেত না। ফলে বই পড়ে অর্জিত জ্ঞান ও প্রায়োগিক জ্ঞান—এ দুইয়ের কম্বিনেশনের উপযুক্ত ফল পেতে সাহায্য করে। বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমি সবসময় চেষ্টা করতাম সিনিয়রদের সঙ্গে চলাফেরা করতে। তারা কীভাবে চাকরির প্রস্তুতি নেন ও কোন বিষয়গুলো বেশি ফোকাস করেন। এ বিষয় দেখে বুঝতে পারলাম যে কোনো চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির চেয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি আমার জন্য সহজ। সবার মতো আমিও রুটিন করে দীর্ঘসময় একটানা পড়েছি। তখন পড়ার বিকল্প কিছু ছিল না। কিছুদিন কোচিং সেন্টারে ক্লাস করেছি এবং পাশাপাশি পরীক্ষাগুলো দিয়েছি। এভাবেই আমার প্রস্তুতি চলছিল। ৩৭তম বিসিএস আমার প্রথম বিসিএস ছিল। অবশেষে আল্লাহর রহমতে শিক্ষা ক্যাডার পেলাম। আমার স্ত্রীও ৩৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার পদে কর্মরত আছেন।

জাগো নিউজ: ৩৭তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছেন, বিষয়টি জানার পর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?ফরহাদ হোসেন: মাধ্যমিকের পর থেকেই চেয়েছিলাম বিসিএস ক্যাডার হতে। যে কোনো ক্যাডারই আমার জন্য আনন্দের। শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছি জেনেও খুশি ছিলাম এই ভেবে যে, আমি ক্যাডার হতে পেরেছি।

জাগো নিউজ: কেউ কি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে? এ ক্ষেত্রে কাকে বেশি মনে পড়ে?ফরহাদ হোসেন: আমার মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কাছ থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তাছাড়া পরিবার থেকেও সর্বোচ্চ সাপোর্ট ছিল।

Advertisement

জাগো নিউজ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিসিএস নিয়ে বেশি উদ্দীপনা দেখা যায়। অনেকেই বিসিএসকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করেন—এমনটি হওয়া উচিত?ফরহাদ হোসেন: বিসিএস নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপনা একটি ইতিবাচক ব্যাপার। এটি প্রজাতন্ত্রের একটি সম্মানজনক চাকরি। সামাজিক অবস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিসিএস কারো জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। কারণ বিসিএসের চেয়ে জীবন অনেক বড়। বিসিএস ছাড়া অন্য পেশায়ও যে কেউ প্রজাতন্ত্রের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারেন। তাই বলা যায়, জীবন মানেই বিসিএস নয়, বিসিএস একটি চাকরি মাত্র।

জাগো নিউজ: নতুন যারা বিসিএসে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?ফরহাদ হোসেন: শুধু তোতাপাখির মতো কয়েকটি গাইড বই না পড়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। সেইসঙ্গে আহরিত জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তবেই বিসিএস যাত্রা সফল হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?ফরহাদ হোসেন: ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা আছে। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে একজন আদর্শ অধ্যাপক হতে চাই। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।

এসইউ/জেআইএম