জাগো জবস

নিজের চেষ্টায় বিসিএস ক্যাডার হন দীপ্ত

দীপ্ত সাহা ৩৮তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কালাচাঁন সাহা ছিলেন ফল ব্যবসায়ী, মা কৃষ্ণা সাহা গৃহিণী। দীপ্ত ২০০৯ সালে শ্রীনগর পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ২০১১ সালে শ্রীনগর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?দীপ্ত সাহা: যদি জিজ্ঞেস করা হয়, মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কোনটা? তবে আমি অবশ্যই বলবো ছোটবেলা। ছোট থেকেই দুরন্ত প্রকৃতির ছিলাম। ক্রিকেট খেলার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। যখনই সুযোগ পেতাম, ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে চলে যেতাম। পড়াশোনায়ও ছোট থেকে ভালো ছিলাম। আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান। মা ছিলেন আমার শিক্ষক। তার আগ্রহের কারণেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেলেও এইচএসসিতে পেয়েছি।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি? দীপ্ত সাহা: আর্থিকভাবে আমার পরিবার ততটা সচ্ছল ছিল না। আমার এখনও মনে আছে, ক্লাস ফাইভে বৃত্তি গাইড কিনতে না পারায় বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। তাছাড়া পরিবারে গাইডলাইন দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। তাই যতটুকু পেরেছি নিজের চেষ্টায় এগিয়েছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?দীপ্ত সাহা: সত্যি বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত বিসিএস সম্পর্কে ধারণা ছিল না। ঢাবির জগন্নাথ হলে ওঠার পর দেখতাম হলের দাদারা বিসিএস দিতেন এবং অনেকেই ক্যাডার পেতেন। তাদের অনুপ্রেরণায় বিবিএ শেষ বর্ষে এসে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম।

জাগো নিউজ: আপনার বিসিএস যাত্রার গল্প কেমন ছিল?দীপ্ত সাহা: প্রথমে ৩৭তম বিসিএসের প্রিলি দেই। পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে ফলাফল খারাপ আসে। মূল কারণ ছিল প্রস্তুতিতে ঘাটতি, গণিত ও বিজ্ঞানে কম জানা। তাই সব বিষয়ের বেসিক ভালো করে জানার চেষ্টা করেছি। কমার্সের ছাত্র হওয়ায় গণিত আর বিজ্ঞানে কিছুটা দুর্বল ছিলাম। হলে থাকাকালীন ৩ রুমমেটই ছিলেন বিজ্ঞানের। তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞান ও গণিতের বিষয়গুলো ভালো করে জেনেছি। এভাবে প্রিপারেশন নিয়ে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে লিড মার্ক নিয়ে পাস করি। রিটেন পড়তে এসে দেখি এখানে অনেক পড়া। অনেকটা সমুদ্রের মতো। তবে বিসিএসের ৩টি ধাপের মধ্যে রিটেন ধাপটা কম্পারেটিভলি ইজি। রিটেন পাস করা সহজ হলেও ক্যাডার পাওয়ার মতো মার্ক তুলতে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হয়। রিটেনের সিলেবাস অনেক বড়। এত পড়া দেখে অনেককে মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়তে হয়। তাই প্রিপারেশন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। যেমন সংবিধান ভালো করে জানলে এটা দিয়েই বাংলাদেশ বিষয়াবলির অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়।

এভাবে নিজের কৌশল এবং সিনিয়রদের থেকে সাজেশন নিয়ে রিটেনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। টানা ৫ দিনের রিটেন দিয়ে কোনো সাবজেক্টে হতাশ হইনি। ৩৮তম লিখিত পরীক্ষা ভালোই দিয়েছিলাম। কিন্তু যেদিন লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হলো সেদিন শিটে নিজের রোল না দেখে অবাক হলাম। চুপচাপ রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে দেখলাম আমি যে রেজাল্ট শিট দেখেছি; সেটা একজন ভুল করে (৩৭তম বিসিএসের রেজাল্ট) আপলোড করেছিল। পরে রেজাল্ট শিটে নিজের রোল দেখতে পেলাম। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ভাইবা ছিল। ভাইবা মোটামুটি দিলাম এবং বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা হবে। আমি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ১৯টি ভাইবায় অংশগ্রহণ করে ব্যর্থ হই। অবশেষে যেদিন ৩৮তম বিসিএসের রেজাল্ট প্রকাশ হলো; সেদিন দুপুরে রূপালি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এবং বিকেলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হই। একদিনে দুটি সরকারি চাকরি।

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?দীপ্ত সাহা: আমার মা-বাবা আমার কাছে সব সময়ই অনুপ্রেরণা। তাদের অনুপ্রেরণা ও আশীর্বাদে আজ এতদূর আসা।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?দীপ্ত সাহা: এসডিজির টেকসই উন্নয়নের ১৭টি পয়েন্টের মধ্যে ৪ নাম্বার হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ। আমার ছাত্রছাত্রীরা যাতে সেই শিক্ষা পেতে পারে, তার জন্য নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করব।

জাগো নিউজ: যাদের স্বপ্ন বিসিএস, তাদের জন্য কী বলবেন?দীপ্ত সাহা: বিসিএস পরীক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য লেগে থাকতে হবে। কথিত আছে, ধৈর্যশীলদের জন্য বিসিএস। তাই ধৈর্য রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্রস্তুতিও শিখরে নিতে হবে। নিজের দুর্বল বিষয়গুলো খুঁজে বের করে সেগুলোর প্রতি জোর দেওয়া এবং বেশি বেশি সময় দিতে হবে। তাহলে প্রতিযোগিতায় কেউ হারাতে পারবে না।

জাগো নিউজ: সম্প্রতি করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?দীপ্ত সাহা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাকসুদা খাতুন স্যারের পরামর্শে করোনাকালীন সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবর্তে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার মধ্যে থাকতে পারে।

এসইউ/জিকেএস