তথ্যপ্রযুক্তি

ইংরেজির ভিডিও কনটেন্টে বাজিমাত ইমামের

ইংরেজি শিক্ষার ডিজিটালাইজেশন নিয়ে কাজ করছেন ইমাম হোসেন। আমাদের মধ্যে ইংরেজি নিয়ে ছোটবেলা থেকে যে ভীতি কাজ করে, তা দূর করতে প্রতিষ্ঠা করেন হেডম্যান একাডেমি। তিনি ভিডিও কনটেন্টে করেছেন বাজিমাত। তার অভিনব ইংরেজি শেখানো নজর কেড়েছে সব বয়সী মানুষের।

Advertisement

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রেইনার ও হেডম্যান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলার গল্প শুনতে চাই—ইমাম হোসেন: ছোটবেলার একটা ব্যর্থতার গল্প দিয়ে শুরু করি। তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। আমার ক্লাস রোল দুই। ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলাম। সেই সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন থাকা সত্ত্বেও ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষায় ফেল করি। স্কুলে জীবনে কেউ ইসলাম শিক্ষায় ফেল করেনি। আমি ফেল করেছিলাম। এটা নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়েছিল। বাসায় অনেক সমালোচনাও হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ছোটবেলায় আমি গুন্ডা হতে চাইতাম, মাস্তান হতে চাইতাম। মারামারি অনেক পছন্দ করতাম। কারো সাথে ঝামেলা হলেই মারতে যেতাম দলবল নিয়ে। এভাবেই রঙিন ছোটবেলা কেটেছে আমার।

জাগো নিউজ: পড়াশোনা শেষে উদ্যোক্তা জার্নিতে কখন এলেন?ইমাম হোসেন: সাধারণত সবার জীবনেই একটা প্লান থাকে। অনার্স-মাস্টার্স পাস করে কোনো একটা চাকরি বা ব্যবসা করবো। তবে এরকম কিছুই আমার ক্ষেত্রে ছিল না। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট শেষ করি; তখন থেকে আমি ফ্রিল্যান্স টিচার হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। আমি টুকটাক করপোরেট ট্রেনিং দেওয়া শুরু করি। বিভিন্ন জায়গায় এবং ডিফেন্সে ট্রেনিং দেওয়া শুরু করি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ইনভাইট করা হতো ফ্রিল্যান্স ট্রেইনার হিসেবে। তখন থেকেই আমার কাজ শুরু।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলুন—ইমাম হোসেন: হেডম্যান একাডেমির যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। আমার মনে হয়, হেডম্যান একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা আমার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। সেরা অভিজ্ঞতাও বটে। একটা বিশাল টিম কাজ করছে, যাদের নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ: ভিডিও লার্নিংয়ে বাজিমাত করেছেন। নতুন যারা কনটেন্ট তৈরি করছে, তাদের জন্য পরামর্শ কী—ইমাম হোসেন: ভিডিও লার্নিংয়ে বাজিমাত করতে পেরেছি কি-না জানি না। ২০১৩ সাল থেকে করপোরেট ট্রেনিং করাচ্ছি। বিসিএস অফিসার, আর্মি অফিসার, সিনিয়র পুলিশ, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা—এরকম যারা অভিজ্ঞ; তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ভিডিও লার্নিংয়ে আমরা হয়তো সবার জন্য বাজিমাত করতে পারিনি। তবে শিশুদের জন্য করেছি। ভাবলাম, জুনিয়র বা শিশু, যারা স্কুলে পড়ে; তাদের জন্য কিছু নেই। তারা সারাদিন ভিডিও গেমস, মোবাইল-ট্যাব নিয়ে পড়ে থাকে। তাদের এখান থেকে বের করে আনতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই ভিডিও বানাতে শুরু করলাম। মজার মজার কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করি।

সেগুলো ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলাম। ছেলে-মেয়েরা বেশ সাড়া দিয়েছে। অভিভাবকরা ফোন করে বলেছেন, ‘আগে ছেলে-মেয়ে ভিডিও গেম খেলতো মোবাইলে, এখন আপনাদের ক্লাসগুলো দেখে। সেগুলো খাতার মধ্যে লিখে রাখে।’ সেগুলো আবার আমাকে ছবি তুলে পাঠাতো। যা আমাকে খুব উৎসাহিত করেছে। বাচ্চাদের জন্য এ উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম হেডম্যান একাডেমি নিয়েছে। তাই যারা নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে চান, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো—যত সম্ভব সিম্পল কনটেন্ট তৈরি করা যায়, তত ভালো। আরেকটি বিষয়—কাদের জন্য কনটেন্ট তৈরি করছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাচ্চাদের জন্য তৈরি করেন, তা হবে একরকম। বড়দের জন্য করলে হবে অন্যরকম। টার্গেট কারা, বাংলাদেশের না-কি বাইরের মানুষ? তার ওপর ভিত্তি করতে তৈরি করবেন। তাহলে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী ঠিক করেছেন?ইমাম হোসেন: ভবিষ্যৎ লক্ষ্য আসলে পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটির মতো প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষার্থী আছে। আমার টার্গেট হচ্ছে এ ২ কোটি শিক্ষার্থীকে যদি এখন থেকে তৈরি করতে পারি, ইংরেজিতে দক্ষ করতে পারি। তাহলে তারা আরও ১০-১৫ বছর পর দেশের বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় থাকবে। তারা দেশকে পরিবর্তন করতে পারবে। আমি সিনিয়র করপোরেটদের ৭-৮ বছর পড়িয়েছি। পড়ানোর পর দেশব্যাপী খুব পরিবর্তন করতে পারিনি। আমি আমার জায়গা থেকে ইংরেজি ভাষা নিয়ে কাজ করছি। ইংরেজির যে ভীতি মানুষের মধ্যে, তা যেন দূর হয়। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, যারা এখন প্রাইমারি লেভেলে; তাদের তৈরি করে দেব। ইংরেজির জন্য তাদের ভবিষ্যতে আর কোথাও যেন আটকাতে না হয়। শিশুরাই ভবিষ্যতে ইংরেজির জন্য নেতৃত্ব দেবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: ইংরেজি শিক্ষার ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে বলুন—ইমাম হোসেন: ইংরেজি শিক্ষার ডিজিটালাইজেশন যতটুকু হয়েছে, তা এই করোনার মধ্যেই। এরআগে যখন বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের ট্রেনিং করাতে যেতাম; তখন দেখতাম ব্লাকবোর্ডে তারা লিখছেন, ডাস্টার দিয়ে পরিষ্কার করছেন। অথবা খুব বেশি যদি হয়ে থাকে হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করছেন। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষাটা আসলে সেভাবে ডিজিটালাইজড হয়নি। আমরা ইংরেজিকে একটা বিষয় হিসেবে পড়েছি। আমরা যদি ইংরেজিকে একটা ভাষা হিসেবে পড়ি, তাহলে আরও ভালো করার জায়গা আছে। আমাদের লিসেনিং প্রাক্টিসের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। একটা স্পিকার বা কম্পিউটার—এরকম সুযোগ এখন বেশিরভাগ জায়গায় নেই। ডিজিটাল বোর্ড এসেছে এখন বিশ্বের বড় বড় জায়গায়। এ সুযোগ-সুবিধা আমাদের এখানে নেই। এরকম অনেক ডিজিটালাইজেশনের জায়গা আছে। যারা বিষয়গুলো জানেন, ভাষা বিশেষজ্ঞ আছেন; তাদের সহযোগিতা নিয়ে সরকার কাজ করলে আস্তে আস্তে ভালো হবে। যদি দ্রুত সম্ভব না হয়, তাহলে হেডম্যান একাডেমি যতটুকু পারে, যতদিন সময় লাগে চেষ্টা করে যাবে।

এসইউ/এমএস