জাগো জবস

ব্যতিক্রমী চিত্রের শিল্পী আর করিম

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

Advertisement

আর করিম গ্রামের ছেলে, গ্রামেই বেড়ে ওঠা। ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের মহেশখালীতে তার জন্ম। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে করিম চতুর্থ। বাবা মোস্তাক আহমদ ছিলেন ব্যবসায়ী, মা খালেদা বেগম গৃহিণী। করিম বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি নেশায় একজন চিত্রশিল্পী। তিনি রংতুলি ছাড়াও লতা-পাতা, কাঠ-কয়লা, বালু, মসুরের ডাল দিয়ে মানুষের প্রতিকৃতি তৈরি করেন। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মহেশখালী উপজেলা শাখার একজন সদস্য। তিনি গ্রামে থেকেই ছবি আঁকতে শিখেছেন। যখন তিনি ছবি আঁকতে শুরু করেন; তখন নিজের আগ্রহ বোঝার মতো বয়সও হয়নি।

আঁকা-আঁকির শুরুর গল্প: কেউ বলতে পারবেন না ছোটবেলায় একাবারে আঁকা-আঁকি করেননি। ছোটবেলায় কমবেশি সবাই ছবি আঁকতে ভালোবাসে। তেমনই করিমও ভালোবাসতেন। হাতেখড়ি সেখানেই। যখন নার্সারিতে পড়েন; তখন থেকে আঁকা-আঁকি শুরু হয়। সেখানকার অন্যান্য বইয়ের সাথে একটি ছবি আঁকার বইও ছিল। বলতে গেলে, বইটিই তার ছবি আঁকার উৎস। ছবি আঁকার বইটি কেন জানি তাকে খুব আকর্ষণ করতো।

করিম ক্লাসের বাইরে বাড়িতে বইটি দেখে দেখে বইয়ের ফুল, ফল, লতা, পাতা এবং পাখি ইত্যাদির ছবি আঁকতে চেষ্টা করতেন। এ বই ছাড়াও অন্য বইয়ের অলঙ্করণগুলো দেখতেন। শুধু যে তার বইগুলো দেখতেন, তা কিন্তু নয়। বড় ভাই-বোনদের বইগুলোও দেখতেন। তখন লুকিয়ে লুকিয়ে তা দেখে আঁকা-আঁকি করতেন।

Advertisement

এভাবে গেল ২ বছর। এরপর করিমকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় প্রাইমারি স্কুলের ২য় শ্রেণিতে। তখন প্রাইমারির বইতে তিনি দেখতে পান হাতে আঁকা রঙিন অলঙ্করণ। যা এর আগে দেখেননি। এর আগে যেগুলো দেখেছেন; সেগুলো কালো কালির অলঙ্করণ ছিল। প্রাইমারিতে এসে তার ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁকটা বেড়ে যায়।

এরপর শুরু হলো বিরতিহীন যাত্রা। ক্লাসে-বাড়িতে যখন-তখন আঁকতে থাকেন। তার গণিত খাতা বেশি লাগতো, তাতে ছবি আঁকতেন বলে। তখন শুধু যে খাতা-কলমে বা পেন্সিলে সীমাবদ্ধ ছিল; তা কিন্তু নয়। যেখানে যা পেয়েছেন, তা দিয়ে আঁকতে পারবেন বলে মনে হয়েছে এবং সেখানেই এঁকেছেন। কয়লা দিয়েও এঁকেছেন। এমনকি মাটিতে পর্যন্ত এঁকেছিলেন।

নার্সারিতে পড়ার সময় ছবি আঁকার কথা তার পরিবার জানতে পেরেছিল। মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই উৎসাহ দিতেন। তার আঁকা ছবি দেখতেও চাইতেন। তবে কে জি স্কুল থেকে যখন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়; তখন তার ছবি আঁকার ব্যাপারটি আলাদাভাবে নজরে আসে। পুরো এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। এভাবেই তার ছবি আঁকার হাতেখড়ি।

যেকোনো বস্তুতে শিল্পকর্ম: রংতুলি ছাড়া ছবি আঁকা বা বানানো নিয়ে বলতে গেলে প্রয়াত কালিদাস কর্মকারের কথা বলতে হয়। তার সম্পর্কে জানতে গিয়েই আইডিয়াটি পান করিম। তিনি বুঝতে পারেন, কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে থাকা তাকে মানায় না। এ উপলব্ধি থেকেই পাতা বা যেকোনো বস্তুতে শিল্পকর্ম তৈরির প্রয়াস তার।

Advertisement

আর করিমের অর্জন: পরিবর্তনই করিমের কাছে অর্জন বলে মনে হয়। দিন দিন নতুন কিছু শেখা, তার সাথে পরিচিত হওয়াই তার কাছে পরিবর্তন। এ শেখাই অর্জন। করিমের কাছে ছবি এঁকে টাকা কামাই করা অর্জন নয়। অজস্র মানুষের ভালোবাসাই তার বড় অর্জন। এ অর্জনই তিনি ধরে রাখতে চান। তার কাছে টাকা, ক্রেস্ট, সনদ ও ভালোবাসা সবই একেকটি পুরস্কারের মতো। অর্জনগুলো দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বিরতিহীন এঁকে চলেছেন।

উল্লেখযোগ্য কাজ: তার কাছে নিজের সব কাজই উল্লেখযোগ্য। তবুও তার মধ্যে পেন্সিলে আঁকা কবি নির্মলেন্দু গুণের ছবি, যেটি কবি তার অনুমতি নিয়ে কবিতাকুঞ্জ বইতে ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া আইয়ুব বাচ্চু, আনিসুল হক, হুমায়ুন ফরীদি, শিমুল মুস্তাফা, সৈয়দ শামসুল হক, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, মান্না দে, ভুপেন হাজারিকা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গ্রামবাংলার কিছু ছবি উল্লেখ করার মতো।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: করিম একজন বাস্তববাদী মানুষ। যোগ্যতার বাইরে স্বপ্ন দেখেন না। এমনকি চারুকলায় পড়তে না পারলেও কোনো আক্ষেপ থাকবে না। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই- ছবি এঁকে যাওয়া। তিনি মনে করেন, এখন তাকে দিয়ে ছবি আঁকা ছাড়া আর কোনো কাজ হবে না। যোগ্য হওয়ার পরও সঠিক মূল্যায়ন না পেলে দুঃখ থাকবে না।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/জিকেএস