ভ্রমণ

পরিবেশের ক্ষতি না করেই সাজানো হচ্ছে মনপুরা

বঙ্গোপসাগরের বুকে নয়নাভিরাম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় আছে ম্যানগ্রোভ বন। বনের ভেতর থেকে উঁকি দেওয়া হরিণের লাজুক চোখ, দখিনা হাওয়া বিচ আর নির্মল বাতাস মিলে এক অনন্য পরিবেশ বিরাজমান সেখানে।

Advertisement

এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপজেলাটি হয়ে উঠতে পারে ইকো ট্যুরিজমের এক অনন্য কেন্দ্রস্থল। সঠিক উপায়ে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে এ দ্বীপকে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি আদর্শ ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে। তার সব উপাদানই এখানে বিদ্যমান।

সেই দিকটি মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যটকরা যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। শহুরে মানুষ যেন গ্রামীণ আবহ উপভোগ করতে পারেন। সে লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে কিছু উদ্যোগ।

এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভাল করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম মিঞা। জাগো নিউজকে তিনি জানিয়েছেন সাম্প্রতিক উদ্যোগের আদ্যোপান্ত।

Advertisement

শামীম মিঞা বলেন, ‘আমরা মূলত ইকো ট্যুরিজমের ওপর নজর দিচ্ছি। অসংখ্য লোক এখানে আসবে। আমরা বনের আশেপাশে কোনো রিসোর্ট করতে দেব না। সেখানে লোকজন ঘুরবে-ফিরবে এবং প্রয়োজনে তাঁবু টাঙিয়ে থাকবে। রিসোর্ট হলে পর্যটকের আনাগোনায় বনের ক্ষতি হবে, হরিণ ধ্বংস হবে এবং নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। সেজন্য আমরা চেয়েছি, যে অঞ্চলে জনবসতি আছে; সে অঞ্চলগুলোতেই ট্যুরিস্টদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে। যাতে এ সমস্যাগুলো না হয়।’

পর্যটকদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবগুলো রাস্তা কংক্রিটের এবং সিসি রাস্তা কিন্তু সেগুলো সরু। এখানে চাইলেও কালো ধোঁয়া ওড়ানো জীপ বা সে ধরনের গাড়ি নেওয়া যাবে না। আমরা চাচ্ছি, কিছু ট্যুরিস্ট-বান্ধব ভিহিকল যেমন- রিকশা, অটোরিকশা কিংবা সাইকেলের ব্যবস্থা করতে। সাইকেলে করে তারা পুরো দ্বীপ ঘুরে বেড়াবেন। যাতে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যতটা পারা যায় সংরক্ষিত হয়।’

পর্যটন এলাকায় পরিবেশ দূষণ বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণ একটি বড় সমস্যা। এ বিষয়ে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পূর্বপরিকল্পনা আছে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর আশেপাশে আমরা প্লাস্টিকের বোতলজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করব। যেসব জায়গায় পর্যটকদের আনাগোনা আছে; সেখানে ইতোমধ্যে প্লাস্টিকের বোতলে কোক, পানি এবং চিপসজাতীয় পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এটি এখন মৌখিক পর্যায়ে আছে। ভবিষ্যতে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ জিনিস প্রমোট করার চেষ্টা করব। তারপরও পর্যটন এলাকায় আমাদের বড় একটি স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ আছে। যারা প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে বিচ এবং পর্যটন এলাকাগুলো পরিষ্কার করে।’

Advertisement

পর্যটন বোর্ড দেশের ৭টি উপজেলাকে সিলেক্ট করেছে যার মধ্যে মনপুরা একটি। এখানে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাকৃতিক পরিবেশে ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় এ পর্যটন এলাকাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

নিরাপত্তার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে শামীম মিঞা বলেন, ‘সত্যি বলতে মনপুরায় পর্যটনের জন্য অনুকূল পরিবেশ এখনো গড়ে ওঠেনি। ট্যুরিস্ট পুলিশ আমাদের এখনো গড়ে ওঠেনি। সেজন্য আমরা স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি। যারা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। দক্ষিণ সাকুচিয়ার ট্যুরিস্ট স্পটে ২০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত।’

রাতের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখনো আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় গড়ে ওঠেনি। সেজন্য আমরা বিপদসঙ্কুল জায়গাগুলোয় থাকার জন্য অনুমতি দেই না। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো বড় গ্রুপ হলেই কেবল বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যথায় সন্ধ্যার মধ্যেই পর্যটকদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা হয়।’

এসএস/এসইউ/এমএস