ভ্রমণ

বিশ্বের ‘প্রথম তাজমহল’ তৈরি করেছিলেন আব্দুল রহিম

বিশ্বের প্রথম তাজমহল নির্মাতা হিসেবে সম্রাট শাহজাহানের নামটিই সবাই জানেন! তবে এ তথ্যটি সঠিক নয়! কারণ শাহজাহানের তৈরি তাজমাহলেরও ৫০ বছর আগে তৈরি হয় বিশ্বের প্রথম তাজমহলটি। আব্দুর রহিম খান-ই-খানান নামক এক কবি তার স্ত্রী মাহ বানুর জন্য ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করেন।

Advertisement

সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজের জন্য যে তাজমহলটি গড়েছেন; সেটি আসলে বিশ্বের দ্বিতীয় তাজমহল। যদিও শাহজাহানের তাজমহলের তুলনায় আব্দুর রহিমের তাজমহলটি নিতান্তই আকারে ছোট।

তাতে কি? স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্যই তারা সবাই তাজমহল গড়েছেন। পুরনো হলেও আজও টিকে রয়েছে আব্দুল রহিমের তাজমহলটি।

জানা যায়, সম্রাট আকবরের নবরত্নদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি আব্দুল রহিম খান-ই-খানান। একে কবি তার উপর আবার সম্রাট আকবরের নবরত্ন, রহিমের পরিচয়টা বেশ রোমাঞ্চকর। তবে অবাক করা তথ্য হলো, আকবরের সৎ ছেলে ছিলেন রহিম!

Advertisement

স্ত্রী মাহ বানুর প্রেমে সবসময় হাবুডুবু খেতেন রহিম। তাই স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার স্মৃতিতে একটি সৌধ তৈরি করেন রহিম। যদিও এ সৌধের কোনো নাম দেয়া হয়নি। একসময়ের দামি বেলে ও শ্বেত পাথরের তৈরি এই স্মৃতিসৌধটিকে সবাই রহিমের স্মৃতিসৌধ নামেই জানেন।

নয়াদিল্লির মথুরা রোডের হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধের কাছেই এ প্রেমের তাজমহলটি অবস্থিত। বরাবরই অগোচরে থেকেছে এ তাজমহলটি। আকারে ছোট হওয়ায় পর্যটকরাও ঘটা করে এ তাজমহলটি ঘুরে দেখেননি। তবে এ সৌধের অজানা ইতিহাস আর প্রেমকাহিনী চাপা পড়ে রয়েছে।

দিল্লির একমাত্র প্রেমের স্মৃতিসৌধ হিসেবে পরিচিত এটি। শোনা যায়, এই সৌধের বাগানটি নাকি হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এখন অবশ্য সেই জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর, দোকানপাট খুলে ফেলেছেন।

এ তাজমহলটি তৈরি করা হয়েছিল যমুনা নদীর ধারে। যমুনা নদীর ওই অংশটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। নাম বরাপুল্লাহ নাল্লা।

Advertisement

জানা গেছে, ৩ হাজার শ্রমিক মিলে নির্মাণ করেন এ তাজমহলটি। দামি সব ইট, পাথর, সুড়কি ব্যবহার করে আব্দুল রহিম এ তাজমহলটি তৈরি করেন।

অনেকটা হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধের মতো করেই স্ত্রীর জন্য তাজমহল গড়েছিলেন কবি রহিম। ১৯২০ সাল নাগাদ শতাব্দী প্রাচীন এই সৌধের মেরামতের কাজ হয়েছিল।

তবে সৌধে থাকা দামি জিনিসপত্র তখন চুরি হয়ে যায়। আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার নামক সংস্থাটি ২০১৪ সালে সৌধটি রক্ষায় মেরামত করে। আর্কিলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনুমতিতে শুরু হয় রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ।

বর্তমানে পর্যটকদের আনাগোনা অনেক বেড়েছে কালের সাক্ষী প্রথম তাজমহলে। দিল্লি-আগ্রা ভ্রমণে গিয়ে লালকেল্লা, কুতুবমিনার, যন্তরমন্তর, হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ, শাহজাহানের তৈরি তাজমহল তো দেখবেনই!

তার সঙ্গে প্রথম তাজমহলটিও দেখতে ভুলবেন না যেন! ইসলামিক নকশার পাশাপাশি এখানে দেখতে পাবেন হিন্দুধর্মের স্বস্তিকা চিহ্নের খোদাইও।

হুরট্রাভেলস/অনলাইনট্যুরগাইড/জেএমএস/এমএস