বিনোদন

সোহেল রানার কান্না ছুঁয়ে গেল প্রধানমন্ত্রীকেও

বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদার স্বীকৃতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রতি বছর চলচ্চিত্রের নানা বিভাগে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। আর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দেয়া আজীবন সম্মাননা।

Advertisement

২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক সোহেল রানা ও কোহিনুর আক্তার সুচন্দা।

আজ ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পদক বিতরণ অনুষ্ঠান। এ আয়োজনে সোহেল রানা সশরীরে হাজির হয়ে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেছেন।

সম্মাননা পদক গ্রহণ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন এ অভিনেতা। তিনি মনের অভিব্যক্তির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একপর্যায়ে উচ্চস্বরেই কেঁদে ফেলেন সোহেল রানা।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম রাষ্ট্রীয় পুরস্কার নিয়েছিলাম আজকের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। আমি ৪৬ বছর চলচ্চিত্রের সঙ্গে আছি। এখানে কাজ করেছি। জীবনের শেষ পুরস্কারটা হয়তো পেয়ে গেছি। আর কখনোই চলচ্চিত্রের জন্য কোনো পুরস্কার আমি পাবো না। আক্ষেপ তো আছেই। শেষ পুরস্কারটা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিতে পারিনি। করোনার কারণে তা হলো না।’

‘সম্মাননা পাচ্ছি। আনন্দ তো আছেই। আনন্দ হওয়ার কথা। কিন্তু মনটা খারাপ লাগছে কেন? কেন জানি খুব দুঃখবোধ হচ্ছে। আমি জানি না কেন হচ্ছে। শুধু ভাবছি, ৪৬ বছর ধরে যা কিছু পাওনা জমিয়েছি এই শিল্পে সব বুঝি এই আজীবন সম্মাননা দিয়ে শেষ হয়ে গেল’- বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সোহেল রানা।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সিনেমায় এসেছিলেন উল্লেখ করে সোহেল রানা বলেন, ‘দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’ আমি প্রযোজনা করেছিলাম। আমি জানিনা কেন বঙ্গবন্ধু আমাকে এত স্নেহ করতেন। সেই সিনেমাটি তিনি দেখেছিলেন। পরে আমি যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গেলাম, উনি বললেন, ‘ভালোই তো বানাইছস। যা ওখানেই থাইকা যা।

আমি সেই গুরুবাক্যকে শিরোধার্য করে চলচ্চিত্র জগতেই রয়ে গেলাম। দ্বিতীয় ছবি করলাম ‘মাসুদ রানা’। তারপর বাকিটা ইতিহাস।

Advertisement

বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন না বলতেন ‘যা চলচ্চিত্রেই থেকে’ তাহলে বাংলার মানুষ, বাংলা ভাষাভাষিরা সোহেল রানাকে চিনতো না। তার জন্যই আজ আমি সোহেল রানা।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, আমার শিক্ষাগুরু, আমার রাজনৈতিক গুরু, যার নাম নিয়ে সেই ১৯৬১ সনে কলেজে ঢুকলাম তখন এই পার্টির রাজনীতি শুরু করেছিলাম সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার পায়ের কাছে আমার আজকের এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করলাম।’

সোহেল রানা যখন এই কথাগুলো বলছেন তখন তিনি অঝোরে কাঁদছেন। তার কান্নায় আবেগতাড়িত হয়েছেন অনলাইনে থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তাকেও দেখা গেল ঠোঁট চেপে কান্না নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবকি থাকার চেষ্টায়।

বর্ষিয়াণ এই অভিনেতা-প্রযোজকের শিশুদের মতো কান্না দেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা অনেককেই চশমা খুলে চোখ পরিস্কার করতে দেখা গেল। শত শত মানুষের মঞ্চে ভর করেছিলো শুধুই নিরবতা।

এলএ/জেআইএম