ফিচার

আদিবাসীদের গহনায় স্বাবলম্বী ঋতিষা

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

Advertisement

ঋতিষা চাকমা জেন্সির জন্ম রাঙ্গামাটিতে। বাবা জনদেব চাকমা সরকারি কর্মকর্তা, মা নমিতা খীসা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। দুই বোনের মধ্যে ঋতিষা বড়। ঋতিষা বি.এড (স্নাতক) শেষ করেন ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে। এম.এড করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

২০১৬ সালে প্রাইভেট ফার্মের এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয় ঋতিষার। গান, উপস্থাপনা ও সাংস্কৃতিক চর্চার প্রতি আলাদা একটি ঝোক ছিল তার। ২০১৭ সাল থেকে ঋতিষা গহনার কাজ শুরু করেন। ফেসবুক পেজ ‘বক্স অব অর্নামেন্টস’র মাধ্যমে। হঠাৎ কাজ শুরু করলেও আস্তে আস্তে আদিবাসীদের ট্রেডিশনাল গহনাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেন।

কেন উদ্যোক্তা হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে কোনো চিন্তা করে হইনি। যেহেতু চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়ে, তাই আমাদের গহনাগুলোর প্রতি টান অনুভব করি। গহনার প্রতি একধরনের ভালো লাগা, ভালোবাসা, ফেসিনেশন কাজ করতো ছোটবেলা থেকেই। এ জন্য গহনা নিয়ে কাজ করছি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমার উদ্যোগ শুরুর পর থেকে পুরোদমে প্যাশন, ডেডিকেশন দিয়ে কাজগুলো করে যাচ্ছি। একধরনের নেশা হয়ে গেছে এ কাজে। মনে হয়েছে, কোনো ক্লান্তি ছাড়াই এ কাজ করে যেতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘পথচলায় অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। গহনা নিয়ে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। কারণ মানসম্মত গহনা এবং ইউনিক ডিজাইন ঠিকমতো কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো সহজ নয়। পুরোদমে ২ বছরের বাচ্চা ত্রিজ্ঞকে সামলে একাই বিজনেস করে যাচ্ছি। পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন আমার স্বামী।’

দেশীয় ক্রেতার পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের হাতেও পৌঁছে দিচ্ছেন ঋতিষা। আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ও পোশাক আছে। কিছু কিছু জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ধাঁচের গহনাও আছে। একেক জনগোষ্ঠীর একেক গহনা। চাকমাদের গহনার মধ্যে রয়েছে- আলছড়া, চন্দ্রহার, তাজ্জুর, পয়জে মালা, টেংগত হারু, হুজি হারু, রাজ্জুর হজ ফুল ইত্যাদি। এ গহনাগুলো আদিম যুগ থেকে চাকমা নারীরা ব্যবহার করে আসছেন। তখন সেই গহনাগুলো রুপায় তৈরি করা হতো।

ঋতিষা বলেন, ‘আমি সিলভার প্লেটড ব্রাস মেটারিয়াল দিয়ে নিজস্ব কারিগর দ্বারা আদিবাসীদের গহনাগুলো তৈরি করে থাকি। রুপায় তৈরি করতে চাইলে রুপায়ও কাস্টমাইজ করে দেই। আগে অনেকেই গহনাগুলো চিনতেন না। এখন অনেকে সমতলেও আমাদের এগুলো চেনেন, পছন্দ করে কিনতে চান।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘যেহেতু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তাই সেইভাবে গহনায় ফিউশনও আনা হয়। আমাদের ট্রেডিশনাল গহনার সাথে সাথে আধুনিক যে গহনাগুলোর চলন বেশি, তা নিয়েও বেশ সাড়া পাচ্ছি। কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের গহনার দায়িত্ব পেলে, তা অনেকে নির্ভরশীলতায় চাপিয়ে দেয়। যা নিজেকে আরও দায়িত্ববান করে তোলে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে দেখতে চাই। সামনে গহনার একটা স্টুডিও খোলার ইচ্ছা আছে। যেখানে গহনার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। আদিবাসীদের গহনাগুলো তুলে ধরতে চাই বিশ্বদরবারে। আশা করছি, আমার গহনাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সাড়া পাবে। আমার সাথে সাথে আরও কয়েকজন কারিগর পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

লেখক: ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।

এসইউ/এমকেএইচ