ধর্ম

আল্লাহ যেভাবে হেদায়েত ও মর্যাদা দান করেন

নিঃসন্দেহে আল্লাহর হেদায়েতই প্রকৃত হেদায়েত। ষড়যন্ত্র যতই হোক না কেন, আল্লাহর যার সহায় হয়, কোনো ষড়যন্ত্রই তার ক্ষতি করতে পারে না। এটি মহান আল্লাহর ঘোষণা।

Advertisement

আর সত্য লুকানো ইয়াহুদিদের অনেক পুরনো অভ্যাস। কুরআনের বর্ণনায় তা বার বার ওঠে এসেছে। ইয়াহুদি জাতি এখনই ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন নয়, বরং ইসলামের প্রাথমিক যুগেও ইয়াহুদিরা জঘন্য ও নিকৃষ্টতম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে।

ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ ও সঠিক পথের বিরোধিতা করাই ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের মিশন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে মুমিন-মুসলমানকে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের প্রাতরণা ও সঠিক হেদায়েত লাভের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-وَقَالَت طَّآئِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُواْ بِالَّذِيَ أُنزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُواْ وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُواْ آخِرَهُ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ - وَلاَ تُؤْمِنُواْ إِلاَّ لِمَن تَبِعَ دِينَكُمْ قُلْ إِنَّ الْهُدَى هُدَى اللّهِ أَن يُؤْتَى أَحَدٌ مِّثْلَ مَا أُوتِيتُمْ أَوْ يُحَآجُّوكُمْ عِندَ رَبِّكُمْ قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ - يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاء وَاللّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِঅর্থ : আর আহলে কিতাবদের একদল বললো, মুসলমানদের উপর যা কিছু অবর্তীণ হয়েছে তা দিনের প্রথম ভাগে মেনে নাও, আর দিনের শেষ ভাগে অস্বীকার কর; হয়তো তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। যারা তোমাদের ধর্মমতে চলবে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। আর এসব কিছু এ জন্য যে, তোমরা যা লাভ করেছিলে তা অন্য কেউ কেন প্রাপ্ত হবে; কিংবা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে দিন, মর্যাদা আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।

তিনি যাকে ইচ্ছা নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সুরা ইমরান : আয়াত ৭২-৭৪)

Advertisement

আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদকিতাবিদের অর্থাৎ ইয়াহুদিদের একদল তাদের অপর কিছু লোককে বলে, (ইসলামে) বিশ্বাসীদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ আল কুরআন, তা দিনের প্রথম ভাগে বিশ্বাস কর আর তার শেষ ভাগে তা প্রত্যাখ্যান কর, হয়তো তারা (ইসলাম) বিশ্বাসীরা নিজেদের ধর্মমত থেকে ফিরে আসতে পারে। কেননা এতে তারা বলবে, এরা জ্ঞানীগুণী। সুতরাং তা গ্রহণ করার পর তা মিথ্যা ও বাতিল বলে জানার পরই কেবল এরা তা থেকে ফিরে গেছে।এরা (ইয়াহুদিরা) আরও বলে যে, যা তোমাদের দ্বীনের অনুগামী অর্থাৎ তোমরা দ্বীনের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল তা ব্যতিত আর কিছু বিশ্বাস করো না। সত্য বলে স্বীকার করো না। আর আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-قُلْ إِنَّ الْهُدَى هُدَى اللّهِ‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, আল্লাহর নির্দেশিত পথই অর্থাৎ ইসলামের সত্যিকারের পথ। অবশিষ্ট সব কিছুই গোমরাহী।একথাও বিশ্বাস করো না যে, তোমাদের যে কিতাবসমূহ, হেকমত ও মর্যাদা দান করা হয়েছে। অনুরূপ তা আর কাউকে দেয়া হবে। আর এ আয়াতের প্রকৃত মর্মার্থ হলো-তোমাদের ধর্মের অনুসারীরা ব্যতিত অন্য কারো কাছে স্বীকার করো না যে, অন্য কাউকে উত্তম মর্যাদা দান করা হয়েছে বা হবে।আর কেয়ামতের দিন তোমাদের প্রতিপালকের সামনে মুমিনরা তোমাদের বিপক্ষে যুক্তি উত্থাপন করবে। তারা যক্তিতে তোমাদের ওপর প্রবল হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, সব অনুগ্রহ মহান আল্লাহ হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। সুতরাং তোমাদের অনুরূপ আর কাউকে দান করা হবে না, এ কথা তোমরা কোথায় পেলে? জেনে রেখ, মহান আল্লাহ প্রাচুর্যময়, অসীম তার অনুগ্রহ। আর কে এসবের যোগ্য তা মহান আল্লাহ ভালোই জানেন। আর মহান আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যাকে ইচ্ছা বিশেষ করে নির্বাচিত করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (তাফসিরে জালালাইন)

ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের যত প্রতারণাএ আয়াতে কারিমা মহান আল্লাহ তাআলা ইয়াহুদি তথা আহলে কিতাবদের একটি বিশেষ প্রতারণার কথা তুলে ধরেছেন। যা দ্বারা তারা মুমিন মুসলমানকে পথভ্রষ্ট করতে চাইতো। এরা হলো মদিনার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের ইয়াহুদি। মুসলমানদের নতুন রাষ্ট্র মদিনায় ইসলামের আহ্বানকে দুর্বল করার জন্যই ছিল তাদের এ প্রতারণা কিংবা চক্রান্ত। আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে তা ইসলামের অনুসারী মুসলমানদের জানিয়ে দিয়েছেন।

মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করার সে কৌশিলটি ছিল এমন-মুসলমানদের প্রতি কুরআনের যে নির্দেশনা নাজিল হয়েছে, তা দিনের প্রথমভাগে তথা সকাল বেলা অনুসরণ কর; আর বিকাল বেলা অর্থাৎ সন্ধ্যায় তা অস্বীকার করে বস। হতে পারে এ কৌশল মুসলমানদের মনে ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে মুসলমানরা সন্দেহমূলক কথাবার্তার জন্য ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

Advertisement

ইয়াহুদিদের এ চক্রান্তে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-হে মুহাম্মাদ! আপনি বলে দিন, তোমাদের এসব চালাকিতে কিছুই হবে না। কারণ, নিশ্চয়ই বান্দাদের যে হেদায়েত তা সরাসরি মহান আল্লাহ পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। সুতরাং হেদায়েত যখন আল্লাহর অধীন; তখন তিনি যাকে হেদায়েত দেবেন; হেদায়েতের উপর রাখবেন, তাকে কেউ কৌশলে তা থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।

ইয়াহুদিদের হিংসা খণ্ডন করতে গিয়ে মহান আলালাহ আরও ঘোষণা করেন-হে মুহাম্মাদ! আপনি বলে দিন, গৌরব মহান আল্লাহর অধীন। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ খুবই প্রাচুর্যময়। তার কাছে গৌরবের অভাব নেই। তিনি এমন জ্ঞানী যে, কখন কাকে কী দিতে হবে, তা তিনি ভালোভাবেই জানেন। তিনি স্বীয় গৌরবের বান্দাদের যাকে যা ইচ্ছা তা নির্দিষ্ট করে দেন। এতে হিংসা করে কোনো লাভ নেই। বরং এ হিংসা অনর্থক।

মনে রাখতে হবেঈমান হেফাজতে কুরআনুল কারিমের এ আয়াতগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ অনুপ্রেরণা। কেননা ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা বিশ্বনবির আমলে যেমন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করতো। আজও তারা তাদের আগের অবস্থানে অনড়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের প্রথম যুগের নও মুসলিম সাহাবিদের ঈমানি ফায়েজ ও সোহবত লাভের তাওফিক দান করুন। ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের ফেতনা ও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলীসমূহের প্রচার ও প্রসার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ