যেখানে-সেখানে থুথু ফেলা কখনোই উচিত নয়। থুথু ফেললে সেখানে মাছি বসতে পারে। মাছি খাবার বা যার উপরে বসে, সেখানেই মল-মূত্র ত্যাগ করে, বমি করে। মাছির পুরো দেহের মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু। মাছি যেন রোগ-জীবাণু ছড়াতে না পারে, সেজন্য খাবার সর্বদা ঢেকে রাখতে হবে।
Advertisement
মাছি থুথু, খাবার বা যার উপরে বসে, সেই জায়গাটিকেই করে ফেলে খুব বেশি জীবাণুযুক্ত। কারণ মাছি তার পুরো দেহে জীবাণু বয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে কফ, থুথু ফেলার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ দূষণ বাড়বে। কারণ থুথুতে মাছি ছাড়াও বিভিন্ন রকম অণুজীব আক্রমণ করে। এ ধরনের ক্ষতিকর অণুজীব খালি চোখে দেখা যায় না।
রোগ-জীবাণু থুথু বা কফের মধ্যে বাসা বাধে, বাচ্চা জন্ম দেয়। সেই বাচ্চাগুলো রোগ-জীবাণু ছড়ায়। এ রোগ-জীবাণু নানা রকম অসুখ (বাতাস বাহিত) তৈরি করে। কফ, থুথু যেখানে-সেখানে ফেলার জন্য নানা রকম চর্মরোগও হয়।
থুথু দেখতে সাদা। আমাদের মুখ থেকে তার সৃষ্টি। কিন্তু রোগ-জীবাণু খুব দ্রুত থুথুতে বাসা বাধে। যদি তা খোলা স্থানে ফেলা হয়। আর কফ হলো ইনফেকশান জনিত সমস্যা থেকে তৈরি। কফ এমনিতেই দূষিত। তাই থুথুর থেকেও কফ দ্রুত অণুজীবগুলো বাতাসে বিভিন্ন রকম রোগ-জীবাণু ছড়ায়। যা বাতাসের সাহায্যে পাশ্বর্তী এলাকায় ছড়িয়ে যায়। মানুষকে বিভিন্ন রকম অসুখে (পানি ও বাতাস বাহিত) আক্রান্ত করে।
Advertisement
এমনিতে আমাদের চারপাশে রোগ-জীবাণু অনেক বেশি। বিশেষত বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খুব তাড়াতাড়ি বায়ু বাহিত অসুখগুলো ছড়িয়ে যেতে পারে। আর কিছু দিন পরে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকবে। শীতকালে জ্বর, কাশি, সর্দি, টনসিলের সমস্যা বেড়ে যায়।
ঠান্ডাজনিত অসুখ যাদের খুব দ্রুত আক্রমণ করে, তাদের আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। বাসার ছোটদের সচেতন করতে হবে। করোনা যুদ্ধে সুস্থ থাকতে আমাদের পরিবারের সবার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। কেউ কাশি, টনসিলের ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে কফ, থুথু ঢাকনাযুক্ত পাত্রে ফেলতে হবে।
বেসিনে কফ, থুথু ফেলার পর খুব ভালোভাবে পানি ঢালতে হবে। বাসার সদস্যদের চেষ্টা করতে হবে আলাদা বেসিন কাজে লাগানোর জন্য। শিশুরা যেখানে-সেখানে কফ, থুথু ফেললে বিপদ বাড়বে। বিষয়টি তাদের শিশু বয়স থেকেই শিক্ষা দিতে হবে।
অনেক শিশু বাসার জানালা দিয়ে থুথু ফেলে। করোনাভাইরাসের কুফল তাদেরও বোঝাতে হবে। নিজেদের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ যতটা কমানো যায়, ততটাই উপকৃত হবো। উন্নত দেশগুলোয় যেখানে-সেখানে কফ, থুথু ফেলা নিষেধ। আমাদের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মিডিয়াগুলোকে আরও তৎপর হতে হবে।
Advertisement
পরিবারের সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করতে হবে। শুধু নিজেদের কথা ভাবলেই চলবে না। আশেপাশের সবার কথা ভাবতে হবে। নিজের ঘর পরিষ্কার থাকলেই চলবে না। অন্যদের কথাও চিন্তা করা দরকার। যতটা পারা যায়, আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অনেক পূর্ণবয়স্ক মানুষ পান খেয়ে যেখানে-সেখানে পিক ফেলেন। বিষয়টি একই সাথে দৃষ্টিকটু এবং পরিবেশ দূষণ করে। পানের পিকের সাথে রাস্তার ধুলা-বালি, রোগ-জীবাণু জমে যায়। সেখানে রোগ-জীবাণু জন্ম দেয় নতুন বংশধর। এভাবে দূষিত হয় পরিবেশ। পরিণামে আক্রান্ত হয় বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
শুধু কফ, থুথু, পানের পিক নয়; যেকোনো ময়লা-আবর্জনা যেন নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। ময়লা-আবর্জনা থেকেই নানা রকম রোগ-জীবাণু ছড়ায়। সেই রোগ-জীবাণু মানুষকে আক্রান্ত করে। তৈরি করে ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত চর্মরোগ। এ রোগগুলো একজন থেকে অন্যের দেহে পৌঁছে যায়। নিজেদের অজান্তে যেকোনো রোগ-জীবাণু দেহে ঢুকতে পারে। এ জীবাণুগুলো কফ, থুথু দিয়ে মুখের বাইরে যায়।
এ ধরনের জীবাণুসহ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাসার বাইরে সব সময় ফেস মাস্ক ভীষণ জরুরি। পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার। তাই নিজেদের, পরিবারের ও আশেপাশের সবার স্বার্থে কফ, থুথু, পানের পিক, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা উচিত।
এসইউ/এমকেএইচ