ভ্রমণ

বাতাসিয়া পাহাড়ের চূড়ায় রেল লাইন

লতিফুল হক মিয়া

Advertisement

সকালের নাস্তা সেরে হোটেলে পৌঁছতে বাজল প্রায় বেলা ১১টা। হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাল, জীপ গাড়ির চালক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই দেরি না করে সবাই উঠলাম গাড়িতে। প্রথমেই গাড়ি চালক নিয়ে গেল বাতাসিয়া লুপে। প্রবেশ ফি ২০ রুপি পরিশোধ করতে হলো আমাদের। গিয়ে দেখি পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে এটি। ফুলের বাগান। সবুজ ঘাস। পাতাবাহার-লতাগুল্ম ইত্যাদি। সান বাঁধানো পথ। চত্বরের মাঝখানে বিশাল উঁচু কালচে গোলাকার স্তম্ভ।

১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে তৈরি হয়েছে এটি। এই বাতাসিয়া পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু শেষ মাথা ছুঁয়ে ঘুরে এসেছে রেল লাইন। ২ ফুটি শর্ট গেজের রাস্তা। অনেকটা খেলনা রেল লাইনের মতো। নাম ‘টয় ট্রেন’! এই লুপের বিশেষত্ব হলো- এটি একটি পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত। অনেকটা মালভূমির মতো। উপর থেকে নিচে ক্রমশ সুষম ঢালু। মাঝখানের মিনার বা স্তম্ভকে ঘিরে রয়েছে শ্বেতপাথরে বাঁধানো চত্বর। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পুরো চত্বরটি কাত হয়ে আছে। একদিকে হেলে পড়ে যেতে পারে। এই ট্রয় ট্রেনে ওঠার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর মধ্যে চেপে বাতাসিয়া লুপ পার হওয়া।

বাতাসিয়া লুপ দেখে আমরা গেলাম রক গার্ডেনে। শহর থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট নিচে নেমে যেতে হবে এই বাহারি ঝরনার বাগান দেখতে হলে। ঝরনার প্রতিটি স্টেপ দেখার জন্য আছে সুন্দর পথ ও সিঁড়ির ব্যবস্থা। চাইলে একদম উপর পর্যন্ত উঠে ঝরনা ও তার আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে আছে বাহারি ফুলের বাগান।

Advertisement

এরপর আমরা গেলাম ‘জাপানিজ প্যাগোডা’য়। সেখানে কিছু সময় ব্যয় করে গেলাম দার্জিলিং রোপওয়ে বা ক্যাবল কার স্টেশনে। কারে চড়তে গেলে আপনাকে ২০০ রুপি গুণতে হবে। এছাড়াও দীর্ঘ একঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। কারে উঠলে বিস্ময়কর দৃশ্য অপেক্ষা করবে আপনার জন্য। যারা প্রথম ক্যাবল কারে চড়বেন তাদের জন্য অনেক রোমাঞ্চকর লাগবে।

আমি যখন ক্যাবল কারে চড়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাচ্ছিলাম, আমার কাছে মনে হচ্ছিল- যেন এক পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে অন্য পৃথিবীতে যাচ্ছি। আর কারের নিচে বাগানের চা গাছগুলো যেন হাত তুলে অভিবাদন জানাচ্ছে। ক্যাবল কারে ২০ মিনিট বসলে পৌঁছে যাবেন অপরপ্রান্তে। ওখানে রয়েছে কয়েকটি হালকা খাবারের দোকান। ওখান থেকে বাগানের চা কেনার সুযোগও রয়েছে। ক্যাবল কারের ফিরতি পথে আবারও লাইন ধরতে হবে। তবে এই যাত্রায় আধাঘণ্টার মতো লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে কারে চড়ে আবার চলে এলাম অপর প্রান্তে।

এরপর আমরা গেলাম হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানে। এটি দার্জিলিংয়ের দ্বিতীয় সবচেয়ে পুরোনো চা বাগান। ১৮৫৪ সালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান চালু হয়। সময় স্বল্পতার কারণে আমরা এখানে খুব বেশি সময় ব্যয় না করে চলে গেলাম তেনজিং রকে। এখানে যা দেখলাম- সন্তুষ্ট হওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই। এরপর আমরা সোজা হোটেলে।

দার্জিলিংয়ে গেলে এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে- স্থানীয়রা সকাল ১০টার আগে রেস্টুরেন্ট, দোকান ও শপিংমল কিছুই খোলে না। সেই সাথে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে আবার সবকিছুই বন্ধ করে দেয়। সুতরাং হোটেল থেকে প্রাকৃতিক কাজ-কর্ম সেরে বেড়িয়ে পড়লাম কেনাকাটা ও রাতের খাবারের জন্য। আমাদের হাতে রয়েছে ২ ঘণ্টা। এরমধ্যে ১ ঘণ্টা রাখলাম কেনাকাটার জন্য, বাকি সময়টা রাতের খাবারের জন্য। এ সময়ের মধ্যেই আমরা কেনাকাটা ও ‘হোটেল মহাকাল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে’ বাঙালি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম আমাদের হোটেলে।

Advertisement

১৪ ডিসেম্বর সকালে দার্জিলিংয়ের আকাশটা মোটেই ভালো না। টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে আগের দিন সন্ধ্যায়। সকালে বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে তীব্র কুয়াশা। এদিন আমরা সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশে যাত্রা করব। তবে তার আগে আমরা যাব টাইগার হিল ও পিস প্যাগোডায়। টাইগার হিলে যেতে চাইলে সাধারণত ভোর ৪টার দিকে রওনা দিতে হয়।

বৃষ্টির কারণে আমরা আর ওই সময়ে যেতে পারিনি। সিদ্ধান্ত হলো সকাল ১০টার দিকে যাবো টাইগার হিলে। যাওয়ার আগে নাস্তা সেরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। নাস্তা তৈরি করতে সময় লাগবে একঘণ্টা। একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা তৈরির অর্ডার দিয়ে এই ফাঁকে গেলাম কেএফসিতে। সেখান থেকে যাত্রাপথে নাস্তার জন্য নিলাম চিকেন বার্গার। বার্গার নিয়ে গেলাম হালকা কিছু কেনাকাটা করতে। এরপর গেলাম রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে। নাস্তা শেষ করে গেলাম হোটেলে।

চলবে...

এসইউ/এমকেএইচ