ঝিনাইদহ শহর ও বিভিন্ন হাট-বাজারে বেড়েছে চুরির প্রবণতা। আটদিনে সদর উপজেলার ৩২টি দোকানে একই পদ্ধতিতে চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়া শহরের মর্গ হাউজ এলাকায় দুপুরে একটি বাড়িতে চুরি হয়। একের পর এক চুরি-ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
Advertisement
ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, ৫ আগস্টের আগে-পরের কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে চুরি ঘটছে বলছেন দোকানিরা। এতে স্থানীয়রা জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ তাদের। কমিটির নেতারাও দুষছেন একে অপরকে। আর সাধারণ মানুষ পুলিশের টহলের স্বল্পতাকে দায়ী করছেন।
জানা যায়, ১২ জানুয়ারি রাতে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারে ওষুধ-কাপড়ের দোকানসহ অন্যান্য সামগ্রীর ১৮টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ১৩টি দোকান থেকে তিন লাখ ৯৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বাকি দোকানগুলোতে শুধু শাটার ভেঙে রেখে দেওয়া হয়। এই দিন বাজারে ১৫ জনের পরিবর্তে রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র আটজন।
একইভাবে ১৬ জানুয়ারি রাতে পার্শ্ববর্তী গোয়ালপাড়া বাজারে দুটি মার্কেটের ১০টি দোকান থেকে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা চুরি হয়।
Advertisement
এর আগে ১২ জানুয়ারি রাতেই জেলা শহরের নতুন হাটখোলা ও ক্যাসেল ব্রিজ এলাকার চারটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। সবশেষ ১৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ঘোষপাড়া এলাকা সংলগ্ন মর্গ হাউজের পাশে ব্যস্ততম সড়কের ধারে একটি বাড়ির গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢুকে নগদ লক্ষাধিক টাকা ও ৬-৭ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোরেরা।
হাটগোপালপুর ও গোয়ালপাড়া বাজারের চুরির ধরন ছিল একই রকম। কোথাও এক সাইডের তালা ভেঙে, আবার লাঠি দিয়ে শাটারের মাঝখান থেকে বাঁকা করে দোকানের ঢোকে চোরেরা। এরপর শুধুমাত্র ড্রয়ার থেকে টাকা নিয়ে যায়। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ঘটে এসব ঘটনা।
হাটগোপালপুরের ঘটনায় ১৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ীরা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। এই মামলায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গোয়ালপাড়ার ঘটনায় রাতেই চুরির অভিযোগে একজনকে ধরে পুলিশে দেন ব্যবসায়ীরা। পরে ১৬ ১৪ আটক মাহাফুজুর রহমান মামুনসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করা হয়। বুধবার সকালে মো. জনিকে গোয়ালপাড়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অন্যদিকে জেলা শহরের দোকান ও বাড়িতে চুরির ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটক বা চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতেও পারেনি পুলিশ।
Advertisement
গোয়ালপাড়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রোকন আহমেদ বলেন, বাজারের দোকানদারদের মধ্যে একতা বা গাইড লাইন নেই। প্রতিটা দোকানি যদি শক্ত থাকতেন তাহলে মনে হয় চুরি প্রতিরোধ করা যেত।
মুরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, দুটো বাজারেই চুরির ধরন একই রকম। তাতে মনে হয় একটি চক্রই দু-জায়গাতে ঘটনা ঘটিয়েছে।
গোয়ালপাড়া বাজারের নিরাপত্তার তদারককারী রুস্তম আলী বলেন, চুরি থেকে বাঁচতে হলে, সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। কারণ চোররা আমাদের আশপাশের গ্রামেই বসবাসকারী। দোকানি ও কমিটির সমন্বয়হীনতা কিছুটা আছে।
এদিকে গোয়ালপাড়া বাজারের সৌদিয়া সুপার মার্কেটের কসমেটিকসের দোকানি তানভীর আহমেদ বলেন, আমরা সব দোকানি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব লুৎফা খাতুন বলেন, অফিস থেকে ফিরে দেখি বাসায় গ্রিল ভেঙে আলমিরা থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। দিনের বেলা শহরের ভেতরে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারিনি।
হাটগোপালপুর নবগঠিত বাজার কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিন্টু বলেন, চুরির দিন রাতে কেন ১৫ জনের পরিবর্তে আগের কমিটি আটজনের দায়িত্ব দিলো বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। হতে পারে নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা কমিয়ে তাদের পাওনা কমিটির লোক আত্মসাৎ করতো। আওয়ামী লীগের দোসররাও চুরির পেছনে জড়িত থাকতে পারে।
আগের কমিটির সভাপতি পরিতোষ কর্মকার বলেন, নিরাপত্তায় আমাদের দায়িত্ব পালনে কোনো ঘাটতি ছিল না। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক না। তারা দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ করুক।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইমরান জাকারিয়া বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারী সুযোগ বুঝে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। কি কারণে এমন ঘটছে তা নিয়ে মন্তব্য করবো না। তবে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে, ধরতে পারলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/জেডএইচ/জিকেএস