আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কত?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতাগ্রহণের পরই ট্রাম্প বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে রয়েছে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ বাতিলের আদেশ।

Advertisement

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী থেকে আসা অধিকার। এতে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে বা প্রাকৃতিকভাবে নাগরিক হয়েছে ও আইনগতভাবে এখানকার অধীনে রয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের নাগরিক। কিন্তু ট্রাম্প এমনটা মনে করেন না।

এদিকে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের পর দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ১৮ হাজার অভিবাসীকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ হাজার ভারতীয় নাগরিকের যে হিসাবের কথা বলা হয়েছে মার্কিন প্রশাসনই তাদের চিহ্নিত করেছে।

এই সংখ্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ বা আইসিই-র তথ্য মিলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইসিই গত বছর নভেম্বরে প্রকাশিত এক তথ্যে জানিয়েছিল, ১৭ হাজার ৯৪০ জন ভারতীয়কে প্রত্যর্পণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল্লির পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে যেন ওয়াশিংটন কোনো ধরনের বাণিজ্যিক বিধি-নিষেধ আরোপ না করে।

প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো থেকে ব্লুমবার্গ জানতে পেরেছে, দেশে ফিরিয়ে আনার আগে অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয় নিশ্চিত করবে ভারত। দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত আলোচনা যেহেতু গোপনে চলছে, তাই সূত্রগুলো নিজেদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

কিন্তু তারা এটা জানাচ্ছে যে, এই সংখ্যা ১৮ হাজারের চেয়ে অনেক বেশিও হতে পারে। কারণ ঠিক কতজন ভারতীয় অভিবাসী বৈধ নথি ছাড়া আমেরিকায় বসবাস করছেন তার সঠিক সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।

প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় জড়িত সূত্রগুলোর কাছ থেকে ব্লুমবার্গ জানতে পেরেছে যে, বৈধ নথি ছাড়া যেসব ভারতীয় নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের অধিকাংশই পাঞ্জাব বা গুজরাটের মতো পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে গিয়েছেন।

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কত?যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করে থাকে। অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিওরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট।

তিনটি বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য পাওয়া যায় যে, কোনো দেশের কতজন অবৈধ অভিবাসীকে সীমান্তে আটক করা হয়েছে, নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বা বৈধ নথি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কতজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

যে কয়েকটি দেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা সব থেকে বেশি সেই তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে ভারত। আইসিইর প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ওই তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে চীন থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীরা, তারপরেই ভারতের স্থান।

তবে তালিকার শীর্ষে আছে মেক্সিকো, এল সালভাদোরের মতো দেশ। পৃথকভাবে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে প্রবেশের সময়ে কোন দেশের কত নাগরিক আটক হয়েছেন বা নিজ দেশে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সীমান্তে প্রবেশের সময় বাধাদানের কাজটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিভাষায় বলা হয় ‘এনকাউন্টার’। যুক্তরাষ্ট্রের সব সীমান্তে গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৬২৫ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘এনকাউন্টার্ড’ হয়েছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯০ হাজার ৪১৫ জন এবং তারও আগের বছর একই সময়ে মোট ৯৬ হাজার ৯১৭ জন ভারতীয় সীমান্তে আটক হয়েছিলেন। এদের সীমান্ত পেরোনোর অনুমতি দেওয়া হয়নি অথবা নিজ দেশে প্রত্যর্পণ করার জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ভারতের পার্লামেন্টেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই একই তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করে একটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিল। অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির গত বছর প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, তাদের হিসাব মতো ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।

প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি। এরই অংশ হিসেবে গত অক্টোবরে বিশেষ বিমানে একশোরও বেশি নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

অক্টোবর মাসের ওই প্রত্যর্পণের সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল যে মন্তব্য করেছেন এর উদ্ধৃত করা হয়েছে ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।

জয়সওয়াল তখন বলেছিলেন, অভিবাসনের বিষয়ে ভারত-মার্কিন সহযোগিতার একটি অংশ হিসেবে দুই দেশ অবৈধ অভিবাসন রুখতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাতে আরও বেশি করে বৈধ অভিবাসী যেতে পারেন, সেই সুযোগ গড়ে তোলার জন্যই এই পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন: ফ্রান্সে অবৈধ বসবাসে সহায়তায় ভারতীয় নাগরিকের কারাদণ্ড অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন/ বাংলাদেশের কঠোর সিদ্ধান্তের পরেই নতুন ঘোষণা ভারতের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত

অক্টোবর মাসের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জয়সওয়াল বলেছিলেন ওই সহযোগিতার অংশ হিসাবেই বিমান ভাড়া করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পিত ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর আগের এক বছর সময়কালে আমেরিকা থেকে এক হাজারের বেশি প্রত্যর্পিত ভারতীয় নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল বলে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

টিটিএন