ফিচার

২শ’ বছর পর পাওয়া গেল তিন ছবির আসল চিত্রকর

চিত্রশিল্পী জয়েন উদ্দিন, ভবানী দাশ এবং রাম দাশের নাম আমরা শুনিনি। এই তিন চিত্রশিল্পীর অঙ্কিত একেকটি ছবির দাম অন্তত ৩ লাখ ৮৭ হাজার ডলার। অথচ ছবিগুলো সবই অন্য নামে। মানুষ জানে না, এসব ছবির প্রকৃত স্রষ্টা কে? ছবিগুলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সংগ্রহ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে দীর্ঘ প্রায় দুশ’ বছর ধরে।

Advertisement

জানা যায়, সম্প্রতি লন্ডনের ওয়ালেস কালেকশন ভারতের প্রতিচিত্র নিয়ে ‘বিস্মৃত শিল্পাচার্য পর্যালোচনা : ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কর্তৃক ইতিহাস চুরি’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। আয়োজনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডারলিম্পল। তিনি জানান, যারা ছবি আঁকলেন; তাদের কোন নাম এতদিন ছিল না। বর্তমানে তার উদ্যোগে মূল চিত্রশিল্পীদের নাম সামনে আসছে। সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

সূত্র জানায়, ছবি এবং তাদের শিল্পীদের ইতিহাস জানতে ফিরে যেতে হবে ১৭৫৭ সালে। যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষ দখল করে। পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের পরে কলকাতা কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পের প্রসার ঘটে। কলকাতা হয়ে যায় পূর্বাঞ্চলীয় উপনিবেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। পশ্চিম থেকে এখানে লোক আসতো দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য। বিপুল সম্পদ উপার্জন করা যেত মাসের মধ্যেই।

তখন এ শহরে আসেন বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পে এবং তার স্ত্রী লেডি মেরি ইম্পে। এ দম্পতি ভারতের ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেশন’ নামে একটি অ্যালবামের জন্য কিছু ছবি আঁকিয়ে নিয়েছিলেন। তাদের অ্যালবামে অন্তত ১৯৭টি মাস্টারপিস ছবি রয়েছে। এ কাজের জন্য তারা ১৭৮০ সালের দিকে কিছু মোঘল চিত্রশিল্পীকে নিয়োগ দেন।

Advertisement

সে সময় শেখ জয়েন উদ্দিন ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তাকে ব্রিটেনের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ স্ট্যাবের সমতুল্য মনে করা হতো। শেখ জয়েন উদ্দিনের দুই শিষ্য বা সহকর্মী ভবানী দাশ এবং রাম দাশ। ভবানী দাশের মেধা জয়েন উদ্দিনের মতই প্রখর ছিল। রাম দাশও ছিলেন নিজের প্রতিভায় স্বতন্ত্র। এ তিন শিল্পীরই বাড়ি ছিল বিহারের পাটনায়। মোঘল আর্ট দ্বারা প্রভাবিত এবং প্রশিক্ষিত এ শিল্পীরা মুর্শিদাবাদ এবং পাটনার নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিলেন।

সেসব বিখ্যাত কিছু চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে ১৭৭৭ এবং ১৭৮২ সালের মধ্যে কোনো এক সময় ভবানী দাশ অথবা তার কোনো সতীর্থ অঙ্কিত একটি বাদুরের ছবি। শিল্পের বিচারে ছবিটি মাস্টারপিস। এছাড়া আঁশের বর্ম দ্বারা আবৃত গুল্মের মধ্যে ছুটন্ত এক প্যাঙ্গলিন। এমন নরম এবং মৃদু রং দিয়ে আঁকা হয়েছে যে, এর পায়ের থাবা দেখতে মনে হবে শাকসবজির মূল। ছবিটি এঁকেছিলেন ১৭৭৯ সালে শেখ জয়নুদ্দিন।

মোঘল আর্ট দ্বারা প্রভাবিত হলেও মেধাবী এ শিল্পীগণ ইউরোপীয় জলরং এবং ওয়াটম্যান জলরং-কাগজের ব্যবহার শিখে নিয়েছিলেন দ্রুতই। তাদের ছবিগুলোতে মোঘল এবং ইউরোপীয় উভয় আর্টের মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। তাই অনেকে একে ‘মিশ্র আর্ট’ হিসেবেও আখ্যা দিচ্ছেন।

লন্ডনের ওয়ালেস কালেকশনে এক্সিবিশনটি উন্মোচন করেছে বিশ্বের সেসব শিল্পকে, যা দীর্ঘদিন বিস্মৃত ছিল এবং ছিল ভুল পরিচয়ে। এর মাধ্যমে ভারতের বিস্মৃত এবং অবহেলিত এ শিল্পীরা আবার সামনে আসছেন।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম