জাতীয়

বাঘ সিংহ বানরে মজেছে শিশুরা

মায়ের হাত ধরে হাঁটছে আঁকা। কখনও হাসি, কখনও বা ভয়ের ছাপ চোখে-মুখে। আশ্চর্য হয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখছিল আঁকা। মায়ের উদ্দেশে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে বাগের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে বলছিল, ‘মাম, সো মাচ এনজয়েবল। আমেরিকাতে এমন বাঘ দেখা যায় না কেন? এখানকার বাঘ মে বি ডিফারেন্ট!’

Advertisement

গত ২৮ জুলাই দেশে এসেছেন আমেরিকান প্রবাসী আইরিন আক্তার। মেয়ে আঁকা ও ছেলে মাহিকে নিয়ে বাংলাদেশ ঈদ করতে আসেন তিনি। উঠেছেন মিরপুরে বাবা-মায়ের বাসায়। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরতে নিয়ে আসেন ছেলে-মেয়েকে। সেখানেই মা আইরিনের উদ্দেশে মেয়ে আঁকার এমন মন্তব্য।

দেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় খুব কাছ থেকে দেখে খুব খুশি আঁকা।

জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আইরিন বলেন, ‘দেশে এসেছি ঈদ করতে। মাসখানেক থাকার পরিকল্পনা নিয়ে আসা। ঘোরাঘুরির তালিকা লম্বা। ঈদে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে চিড়িয়াখানা মোস্ট প্রিফারেবল। তাছাড়া বাসার খুব কাছে হওয়ায় তর সয়নি। সকাল সকালই চলে আসছি। ওদের প্রশ্নের শেষ নেই। আমেরিকাতে ওদের বেড়ে ওঠা। কিন্তু রক্তে তো বাঙালিয়ানা আছে। বিদেশি পশু-পাখির সঙ্গে দেশীয় প্রাণি দেখাতেই চিড়িয়াখানায় ওদের নিয়ে আসা।’

Advertisement

ঈদুল আজহায় কোরবানি নিয়ে নগরবাসীর ব্যস্ততা শেষে দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। রাজধানীর পথ-ঘাট, মার্কেট ফাঁকা হলেও জনস্রোত চিড়িয়াখানায়।

দুপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকে দীর্ঘ লাইন। হালকা বৃষ্টির আবহ। কখনও কমছে, কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি ঝরছে। কাদা-পানি মাড়িয়েও চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর স্রোত। শুধু টিকিট কাউন্টার কিংবা প্রবেশ পথেই জনস্রোত নয়, ভেতরে প্রতিটি পশুর খাঁচার সামনেও উপচে পড়া ভিড়। জিরাফ, সিংহ ও ভারতীয় সাদা বাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, আর বানরেন খাঁচার সামনে শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সী দর্শনার্থীর ঢল নামে চিড়িয়াখানায়। দুপুর গড়াতে সে সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

বানরের খাঁচার সামনে ভিড় বেশি শিশুদের। কেউ বাদাম ছুড়ে বানরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, কেউ কলা ছুড়ে দিচ্ছে। আবার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের খাঁচার সামনেও শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

আবির হাসান নামে এক শিশু এসেছে মামার হাত ধরে। মামার হাত ধরে সাহসের সঙ্গে খাঁচার বাইরে থেকে টাইগারের উদ্দেশে আবিরের ডাক ‘হালুম মামা হালুম মামা’। যদিও ওই ডাকে বাঘের কোনো সাড়া নেই।

Advertisement

মামা সৈকত মৃধা বলেন, ‘বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বিনোদনকেন্দ্রগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। চিড়িয়াখানা হলে তো কোনো কথাই নেই। রাজধানীর অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের চেয়ে চিড়িয়াখানা শিশুদের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি প্রাণীর সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। ওদের ভেতরে অজানা নানা প্রশ্নের উদ্রেক হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’

সাভার থেকে বাবা আনিসুর রহমানের সঙ্গে চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছে সিফাত। খুব আগ্রহ নিয়ে সিংহ দেখছিল। মুখে কেন দাঁড়ি, চোখ কেন ওমন ভয়ঙ্কর। সব উত্তর চায় সিফাতের। বুঝিয়ে শুনিয়ে একটার পর একটা প্রাণী দেখানোর চেষ্টা করছেন বাবা আনিসুর।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে নানা প্রজাতির প্রাণী দেখে ছেলের ভীষণ ভালো লাগছে। পাঠ্যপুস্তক আর বাস্তবতা যে ভিন্ন তা এখানে না আনলে ওরা বুঝবে কী করে?’

যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডাক্তার এস এম নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ঈদে ডেঙ্গু আতঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া আবহাওয়াটাও বেশ খারাপ যাচ্ছে কাল থেকে। এরপরও প্রায় দেড় লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের নির্বিঘ্নে চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরি নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, আনসার, পোশাকধারী পুলিশ ও চিড়িয়াখানার নিজস্ব নিরাপত্তা সদস্যরা কাজ করছেন।’

জেইউ/এনডিএস/পিআর