দেশজুড়ে

দৌলতদিয়ায় নদী পারে ভোগান্তি এখন নিত্যদিনের

নদী পারের অপেক্ষায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী বাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা ও পণ্যবাহী ট্রাকের দিনের পর দিন আটকে থাকা এখন নিত্যদিনের চিত্র।

Advertisement

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ও যাত্রী ফেরিতে নদী পারাপার হয়। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে সব সময়ই দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী পারের অপেক্ষায় লম্বা সিরিয়ালে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকছে শত শত যানবাহন।

যাত্রী ও যানবাহন চালকদের অভিযোগ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ নৌরুটে ফেরি সংকট ও ঘাট ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে না হওয়ায় পুরো বর্ষা মৌসুমে তাদের এমন ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। তবে যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ সময় ট্রাক টার্মিনাল ও সড়কে আটকে থেকে চালক ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি যথাসময়ে মালামাল গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়া সিরিয়ালে আটকে থাকায় খাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের খরচ।

Advertisement

দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছেন, পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। এতে প্রতিটি ফেরিকে নদী পার হতে আগের তুলনায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। বর্তমানে এই রুটে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৪টি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করছে। এর মধ্যে বড় ৭টি ও ছোট ৭টি ফেরি। আগে একই সংখ্যক ফেরি দিয়ে দিনে ১৯০ থেকে ১৯৫টি ট্রিপ হতো, এখন ১৫০ থেকে ১৫৫টি ট্রিপ হচ্ছে। ফলে নদী পারাপারের অপেক্ষায় সব যানবাহনকে সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে প্রতিনিয়তই ঘাটগুলোকে উঁচু-নিচু করতে হয়। এ কারণে সে সময় ফেরিতে গাড়ি লোড-আনলোড বন্ধ রাখতে হয়। সেই সঙ্গে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়ক পিচ্ছিল থাকায় যানবাহন লোড-আনলোডে সময় বেশি লাগছে।

জানা গেছে, এই রুটে ফেরি সংকট, নদীতে তীব্র স্রোত ও ঘাট সংস্কারের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহন পারাপারে প্রয়োজনের তুলনায় কম ফেরি চলাচল করায় সব ধরনের যানবাহনকে দৌলতদিয়া প্রান্তে সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে ছোট-বড় ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। আজও নদী পারের অপেক্ষায় দৌলতদিয়ায় প্রায় ৪ শতাধিক যানবাহন সিরিয়ালে রয়েছে।

ঢাকামুখী পরিবহনের যাত্রীরা বলেন, দৌলতদিয়ায় যাত্রী ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। কী কারণে এই ভোগান্তি তা সবাই জানে। কিন্তু স্থায়ীভাবে কোনো সমাধান হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এ রুটে পর্যাপ্ত ফেরি চালানো উচিত।

Advertisement

ট্রাকচালকরা জানান, তারা অনেকেই গতকাল (সোমবার) দুপুরে দৌলতদিয়া প্রান্তে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েছেন, এখন পর্যন্ত ফেরি পাননি। কখন পাবেন সেটাও বলতে পারছেন না। এদিকে মালামাল সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে দিতে না পারায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে সিরিয়ালে আটকে থাকায় ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়ছে খরচ। নদীতে ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের এ ভোগান্তি। এ থেকে তাদের মুক্তি মিলছে না।

যাত্রীবাহী পরিবহন চালকরা বলেন, নদী পারের জন্য প্রতিদিনই তাদের দৌলতদিয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এতে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ঘাটে আটকে থাকায় শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ছেন। নদীতে স্রোত আছে, কিন্তু ফেরি কম। এ নৌপথে যানবাহনের চাপ অনুসারে আরও ফেরি প্রয়োজন।

তারা বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে মূলত এ যানজটের সৃষ্টি হয়। কারণ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কোনো সমাধানের উদ্যোগ নেন না। পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিলে এবং ফেরির সংখ্যা বাড়ালে তাদের এই ভোগান্তি হতো না। এ অবস্থায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬টি ফেরিঘাট নদীর পানির সঙ্গে মিল রেখে উঁচু-নিচু করতে হচ্ছে। পানি বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘাট সাময়িক বন্ধ রেখে কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমানে ৬টি ঘাটের ৫টি হাই ও ১টি মিড ওয়াটারে নেয়ার কাজ চলছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আবু আব্দুল্লাহ জানান, নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় নদী পারাপারে ফেরিগুলোর দ্বিগুণ সময় লাগছে। এ কারণে ফেরির ট্রিপের সংখ্যাও কমে গেছে। ফলে দৌলতদিয়া প্রান্তে বেশ কিছু যানবাহন সিরিয়ালে রয়েছে।

রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/জেআইএম