স্থলবন্দরগুলো দিয়ে যাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে সেসব এলাকায় কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট স্থাপন করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ফলমূলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ফরমালিনের ব্যবহার রোধে সরকারি সংস্থাকে পরীক্ষার কাজ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
Advertisement
এর আগে এ বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন হয় না মর্মে আদালতকে জানানোর পর আদালত এই আদেশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জাগো নিউজকে জানান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
একই সঙ্গে বাজারে থাকা মৌসুমী ফলমূলসহ অন্যান্য সব ফল নিয়মিত পরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সঙ্গে সঙ্গে দুই মাস পর এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।
আমসহ বিভিন্ন ফলের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ফরমালিন রোধে করা আবেদন শুনানিতে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
Advertisement
আদালতে আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার হাসান মোহাম্মদ রাশেদুল।
আদালতে আজ আমসহ মৌসুমী ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার রোধ সংক্রান্ত মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে ফরমালিন পরীক্ষায় আধুনিক যন্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি ওঠে আসে। তখন আদালত বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এজন্য খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত রাখতে হবে। সরকার যে কোনো কিছুতে অর্থ বরাদ্দে কোনো কার্পণ্য করছে না। কিন্তু সেটার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
আদালত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কাজ। ফলমূলে কেমিক্যালের ব্যবহার রোধে তাদের নিয়োগ করা সম্ভব নয়। এজন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। মোবাইল কোর্ট জরিমানা করছে অসাধু ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ক্যামিক্যালের ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। এজন্য বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে হবে। যারা কেমিক্যাল আমদানি করে তাদেরকে ধরতে হবে।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘প্রয়োজনে সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করবে। কিন্তু ফল পাকাতে যে ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার হয় সেটা রোধ করতে হবে।’
Advertisement
আদালত বলেন, উচ্চ আদালত থেকে ঋণ খেলাপির তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সেটা তালিকা সরকার প্রস্তুত করে জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছে। এটা অবশ্যই সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এমআর হাসান বলেন, ‘বাজারে যেসব ফল রয়েছে সেসব ফলে ফরমালিন ব্যবহার করা হলেও তা কাজে দেয় না। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি প্রতিবেদন রয়েছে। আর আমরা সারা বছরই সার্ভিল্যান্স টিমের মাধ্যমে ফলমূল পরীক্ষা করে থাকি।’ এ সময় রিটকারি পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ফরিদুল আলম শুনানি করেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে সাতদিনের মধ্যে রাজশাহীসহ সারা দেশে আম বাগানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আইন-শৃংখলা বাহিনীর তদারকির ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশে ফলের বাজার ও আড়তে আমসহ অন্যান্য ফলে কেমিকেল ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা মনিটর করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাসায়নিক মিশিয়ে বাজারে ফল বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তাও তদারকি করতে নির্দেশে দেওয়া হয়।
এজন্য পরে ২০ মে হাইকোর্ট পুলিশ, র্যাব, বিএসটিআই ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে টিম গঠন করতে বলা হয়। এসব আদেশ কার্যকর করে একমাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে খাদ্য, স্বরাষ্ট্র ও শিল্প সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজি, র্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক (কেমিক্যাল টেস্টিং উইং), রাজশাহী জেলা প্রশাসক এবং পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজিকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এরও আগে এইচআরপিবি’র করা এক রিট আবেদনে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে হাইকোর্ট আম বাগানে আইন-শৃংখলাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে আমদানি করা ফল-এ রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে স্থল ও সমুদ্র বন্দরসহ সকল আমদানি পয়েন্ট-এ ফল পরীক্ষার ব্যবস্থা (কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট) চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ফলে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া কাঁচা আম পাকাতে কেমিক্যালের ব্যবহার বন্ধের জন্য ৬ মাসের মধ্যে একটি গাইড লাইন তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এইচআরপিবি’র করা আবেদনে হাইকোর্ট নতুন করে আদেশ দিলেন।
এফএইচ/এমআরএম/এমএস