খেলাধুলা

দলে না থেকেও বিশ্বকাপে আশরাফুল!

খুব আশায় ছিলেন বিশ্বকাপ খেলবেন। সবরকমের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফেরা মোহাম্মদ আশরাফুলের স্বপ্নই ছিল এবারের বিশ্বকাপ খেলা। কিন্তু সে স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেছে। বাস্তব রূপ পায়নি। জীবনের একটি বড় ভুলই কাল হলো আশরাফুলের।

Advertisement

নিষেধাজ্ঞার মুখে না পড়লে হয়তো এখনো দলে থাকতেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠে এমন পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি, যা দিয়ে বিশ্বকাপ দলে ঢোকা যায়। তাই আশরাফুল নেই বিশ্বকাপে। কিন্তু দলে না থেকেও বিশ্বকাপে ঠিকই আছেন আশরাফুল!

কি অবাক হচ্ছেন? বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পেয়ে আবার বিশ্বকাপে থাকেন কি করে? নাহ! মোটেই অবাক হবেন না। বিশ্বকাপ দলের বাইরে থেকেও আশরাফুল আছেন বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালকের ম্যাচের আগে বারবার ঘুরেফিরে উঠলো বাংলাদেশের সব সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটিং প্রতিভার নাম।

নটিংহ্যামের প্রেস কনফারেন্সে, প্রেস বক্সে আর সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগিদের মুখে আজ আশরাফুলের নাম উচ্চারিত হলো বারবার। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফির মুখেও আশরাফুলের নাম, তার প্রশংসা।

Advertisement

সেটা কোন ঠুনকো অজুহাত বা এমনি এমনি নয়। ইতিহাস জানাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যে একটি মাত্র জয় আছে, সে সাফল্যর রুপকার ও নায়ক যে আশরাফুল। তাই তার নাম উঠে এসেছে।

সবার জানা ২০০৫ সালে এই যুক্তরাজ্যে ন্যাটওয়েষ্ট ট্রফিতে আশরাফুলের ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিতেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। দিনটি ছিল ২০০৫ সালের ১৮ জুন। সেটাই শেষ নয়। কাল (বৃহস্পতিবার) যে মাঠে খেলা, সেই নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজেও আশরাফুলের আছে দুর্দান্ত এক ইনিংস।

সে ইনিংসে হয়ত দল জেতেনি। তবে আশরাফুল স্মরণীয় হয়ে আছেন তার উত্তাল উইলোবাজির জন্য। নটিংহ্যামের ‘ট্রেন্ট ব্রিজ’ কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন নয়। এই মাঠে সে অর্থে বাংলাদেশের কোন সুখস্মৃতি নেই।

এর আগে বাংলাদেশ ট্রেন্ট ব্রিজে দুটি ওয়ানডে খেলেছে। দুটিই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথমটি ২০০৫ সালের ২১ জুন আর পরেরটি ২০১০ সালের ৮ জুলাই। প্রথম বার হেরেছিল ১৬৮ রানের বিরাট ব্যবধানে। পাঁচ বছর পর মানে ২০১০ সালে ব্যবধান কমে এসেছিল খানিকটা। সেবার এই নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে টাইগাররা হার মেনেছিল ৬ উইকেটে।

Advertisement

কিন্তু ম্যাচ জয়ের সুখস্মৃতি না থাকলেও একটি ব্যক্তিগত ইনিংস নটিংহ্যামের ক্রিকেট অনুরাগিদের স্মৃতিপটে ছবির মত আঁকা হয়ে আছে। তা হলো, ২০০৫ সালে এই মাঠে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৪ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

অ্যান্ড্রু স্ট্রস (১৫২) আর পিটার কলিংউডের (১১২) সেঞ্চুরিতে করা ৩৯১ রানের হিমালয় সমান স্কোরের জবাবে আশরাফুল খেলেছিলেন এক টর্নেডো ইনিংস। ১৮০.৭৬ স্ট্রাইকরেটে আশরাফুল ইংলিশ বোলারদের ইচ্ছেমত পিটিয়ে ৫২ বলে ৯৪ রানের এক উত্তাল ইনিংস খেলেছিলেন। আজকের ম্যাচের আগে তাই আশরাফুলের প্রসঙ্গই উচ্চারিত হলো।

অধিনায়ক মাশরাফিও স্মৃতিচারণ করলেন ১৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার এবং এখন পর্যন্ত একবারের মত হারানোর সে ম্যাচের। প্রেস কনফারেন্সে একজন প্রশ্ন করলেন, আপনাদের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো একটি মাত্র জয়। আর সে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক আশরাফুল। তার অনবদ্য সেঞ্চুরিতেই আপনারা ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতেছিলেন। পরে এই নটিংহ্যামেই আশরাফুল যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঝড়ের গতিতে ৯৪ রান করেছিলেন, সে ইনিংসটি কি কালকের ম্যাচে কোন রকম অনপ্রেরণা হতে পারে না?

আশরাফুলের সেদিনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেই মাশরাফির বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁ, সে ম্যাচের স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল। আশরাফুল সত্যিই খুব ভাল খেলেছিল। কিন্তু আমার মনে হয় না, কালকের ম্যাচে তার সে ব্যাটিং অনুপ্রেরণার প্রতীক হতে পারে। কারণ টিম পারফরমেন্স ছাড়া কোন ব্যক্তিগত পারফরমেন্স দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারে না। ব্যক্তিগত পারফরমেন্স, ব্যক্তিগতই থাকে। টিমের আলোকে তার মূল্য কম। দল না জিতলে আর দলগত পারফরমেন্স ভাল না হলে তার কোন অতীত স্মৃতি দলকে চাঙ্গা করতে পারে না।’

নন্দিত-নিন্দিত আশরাফুল হয়ত এখন অনেক কারণেই অনুপ্রেরণার প্রতীক নন। তবে ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই নটিংহ্যামে খেলা ৯৪ রানের ঝড়ো ইনিংস কিন্তু ক্রিকেট অনুরাগিদের মনের আয়নায় ঠিক জ্বলজ্বল করছে।

এআরবি/এসএএস