কৃষি ও প্রকৃতি

গাছে নারকেল নেই, ভিয়েতনামের চারা রোপণের পরামর্শ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নারকেল গাছের অধিকাংশে ফলন নেই। আবার কিছু গাছে ফলন থাকলেও নারকেলের আকার ছোট ও দাগযুক্ত। গাছ থেকে পাড়ার পর দেখা যায় অর্ধকের বেশি নারকেল নষ্ট। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনায় এর প্রভাব বেশি।

Advertisement

প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকার মধ্যে নারকেল একটি। একদিকে যেমন অর্থকারি ফসল হিসেবে কৃষকের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয় অন্যদিকে নারকেল থেকে তেল তৈরি হয়। পিঠাপুলি তৈরিতে নারকেল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে বর্তমানে নারকেলের গাছগুলোতে ফলন নেই। আবার কিছু কিছু গাছে ফলন হলেও নারকেলের আকার ছোট।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে এসব এলাকার গাছগুলোতে আগের মতো নারকেল হওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য নতুন জাতের সাগর পাড়ের জাত ভিয়েতনামের নারকেল গাছের চারা রোপণের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে এটিতে কৃষকদের খুব বেশি আগ্রহ নেই।

সাতক্ষীরা সদরের তালার শিবপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ খাঁ জাগো নিউজকে বলেন, আমার ৪০-৫০টি নারকেল গাছ রয়েছে। গাছগুলো অনেক বড়। ১০-১৫ বছর আগে নারকেল গাছের ফলন হতো অধিক। নারকেলের আকার ছিল বড়।বর্তমানে এখন আর গাছে ফলন ধরে না। কয়রকটি গাছে ফলন ধরলেও ভেতরে নষ্ট। নারকেলের আকার ছোট ও দাগযুক্ত।

Advertisement

কোনো কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়েছন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন মানুষ পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

মাঝিয়াড়া এলাকার রাজীব হোসেন বলেন, এলাকায় কয়েক হাজার নারকেল গাছ আছে। হাতেগোনা কিছু গাছে ছাড়া কোনো গাছে ফলন নেই। স্থানীয়দের ধারণা মোবাইল টাওয়ারের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে এমন হচ্ছে।

সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমার নিজের কয়েকশ নারকেল গাছ রয়েছে। এলাকাতে রয়েছে কয়েক হাজার। কোনো নারকেল গাছেই ফলন নেই। কিছু গাছে ফলন হলেও নারকেলের আকার খুব ছোট ও ভেতরে নষ্ট। এমনটা কেন হচ্ছে সঠিক কারণ জানা নেই।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পুষ্টির অভাবে নারকেল গাছগুলোতে ফলন নেই। কিছু গাছে ফলন হলেও সেগুলোর আকার হয় ছোট ও ভেতরে নষ্ট। নারকেল গাছের গোড়ায় মাটির দরকার হয়। কিন্তু অধিকাংশ গাছের গোড়ায় দেখা যায় মাটি নেই। যার কারণে পুষ্টি পায় না গাছগুলো। গাছের জন্য পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হয়, সেগুলো কৃষকরা ব্যবহার করেন না। ফলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নারকেল গাছে।

Advertisement

তবে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপপরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, ৯০’র দশক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনাতে নারকেল গাছগুলোতে ফলন কমতে শুরু করে। এর মূল কারণ হচ্ছে মাকড় অর্থাৎ মাকশার আক্রমণ। ২০০০ সালের পরে বিষয়টি নজরে আসে কৃষি অধিদফতরের। বর্তমানে এটি মহামারি আকারে ধারণ করেছে। ফলশ্রুতিতে নারকেল গাছগুলো আক্রান্ত ও সেই সঙ্গে ফলনে দেখা দিয়েছে প্রভাব।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের নারকেল গাছে মাকড় নিধনের স্প্রে ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে কৃষকদের আগ্রহ নেই। পাশাপাশি নতুন উদ্ভাবনী ছোট জাতের নারকেল গাছের চারা রোপণের জন্য বলা হচ্ছে। যেগুলো সাগর পাড়ের দেশ ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছে। এসব নারকেল গাছে একদিকে যেমন ফলন বেশি হবে অন্যদিকে নিচে দাঁড়িয়েও নারকেল পাড়া যাবে। সেজন্য কৃষকদের নতুন জাতের নারকেল গাছের চারা রোপণের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

আকরামুল ইসলাম/এএম/পিআর