জাতীয়

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অপেক্ষা, সব মিটার হবে প্রিপেইড

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সমন্বয়ের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। এছাড়া গ্যাসের সব মিটার প্রি-পেইড করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

Advertisement

রোববার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের দামটা সমন্বয় করা দরকার। আমি বারবার বলে আসছি। বার্ককে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি) আমরা গ্যাসের দামের বিষয়টি সাবমিট করেছি। এখন সম্পূর্ণ বার্কের ওপর নির্ভর করছে তারা গ্যাসের দাম সমন্বয় করবে কি-না। প্রাইস সমন্বয়ের জন্য আমরা গত বছর থেকে অপেক্ষায় আছি।’

শিল্প ও গৃহস্থালি উভয় ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয় দিয়েছে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সব জায়গায় কিছুটা সমন্বয়ের জন্য বলেছি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরের আগস্ট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করেছি। ১০০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট), ২০০ এমএমসিএফ...ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করেছি। এই গ্যাসের মূল্য আমাদের নিজস্ব গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি। সরকার নিজস্ব গ্যাসের ওপর প্রচুর পরিমাণ সাবসিডি (ভর্তুকি) দেয় বছরে। গ্যাসে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো সাবসিডি দেয়া হয়। এটা করা হয় শিল্পকে সহায়তা দেয়ার জন্য।’

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের দাম আমরা সমন্বয় করতে চাচ্ছিলাম এজন্য যে, গ্যাস আমরা আমদানি করছিলাম এতদিন ধরে, এখানে গ্যাসে আমরা ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছি। এখন সামনে আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এই টাকাটা আসবে কোথায় থেকে? গ্রাহকের কাছ থেকে তো আগের দামে সেই টাকা আসছে না। যদি সমন্বয় না করেন, সেক্ষেত্রে সরকারের সমস্যা দেখা দেবে।’

বার্ক মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী দাম সমন্বয় করলেও গ্যাসে সরকারকে সাবসিডি দিতে হবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা শতভাগ (ভর্তুকি উঠিয়ে) করতে চাচ্ছি না। এ জায়গার কমফোর্টরা শেখ হাসিনার সরকারকে বেশ কিছুদিন রাখতে চায়। কারণ আমাদের ক্রয়ক্ষমতার ওই জায়গায়টা এখনও তৈরি হয়নি।’

‘বার্ক টাকাটা সমন্বয় না করলে এই টাকাটা সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে। আমরা এখনও অপেক্ষায় আছি। দাম সমন্বয় না করলে সরকারকে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিতে হবে চলতি অর্থবছর।’

Advertisement

নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘বাসাবাড়ি ও আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহারে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। এটা বরাবরই আমরা বলছি। আমরা একটা বড় প্রকল্প নিচ্ছি ঢাকা শহরসহ সব জায়গায় পুরনো গ্যাস লাইনগুলো উঠিয়ে ফেলে নতুন গ্যাস লাইন আমরা করব। সেখানে প্রি-পেইড মিটার বসাবো। দুই লাখ গ্যাসের মিটার সংযোগ গেছে। আমরা আবেদন করেছি জাইকাকে সহযোগিতা করার জন্য, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার বাসাবাড়িতে ব্যাপকভাবে একশ পার্সেন্ট দেয়া যায় কি-না সেটার ব্যবস্থা আমরা নিতে যাচ্ছি।’

কবে নাগাদ এটা করা হবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বলা মুশকিল তবে আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব করার জন্য।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের আগের বছরের চেয়ে এবার বিদ্যুতের অবস্থা ভালো ছিল। আমরা বলতে পারি আমরা সর্বোচ্চ উৎপাদন করেছি এই সময়ের মধ্যে। প্রায় ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। কিছু ঝড়-বাদল হয়েছে, সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার বিষয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যেগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি সেগুলো এ বছর সারিয়ে উঠতে পারব।’

গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাত লক্ষ্যানুযায়ী এগোচ্ছে কি না- জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা টার্গেট অনুযায়ী এগোচ্ছি। কারণ টার্গেট থেকে আমরা অতিরিক্তই থাকব এবারও বিদ্যুতে। আমাদের টার্গেট হলো ২০২১ সাল ধরে তারপর ২০৩০ সাল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২০৪১ সালের প্ল্যানটা আমরা করে ফেলেছি।’

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যা পেল বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ফলপ্রসূ ছিল। আমাদের টার্গেট ফুলফিল করার জন্য জাপান একটা বড় সহায়ক শক্তি। মাতারবাড়িতে যে এনার্জি পোর্ট হচ্ছে সেখানে বিশাল আর্থিক সহযোগিতা ওনারা করে যাচ্ছেন। এবার আরও কিছু অর্থের সহযোগিতা পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য মাতারবাড়িতে ল্যান্ড বেইজ টার্মিনাল এবং ল্যান্ড বেইজ এলপিজি টার্মিনাল। দুটি পোর্ট হলে গ্যাসের ক্ষেত্রে দাম অনেক সাশ্রয়ী হবে। এলপিজিও সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা বাজারে দিতে পারব। এটা করতে সময় লাগবে। এটা করতে বেশ সময় লাগবে, ৪/৫ বছর সময় লাগবে এই ধরনের ডিপসি টার্মিনাল করতে।’

মাতারবাড়িতে এক্সটেনশন প্রজেক্টের জন্য জাপান আরও ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বলেও জানান তিনি।

কোল টার্মিনাল করার জন্য বেসরকারিভাবে জাপানের কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাতারবাড়িতে একটি কোল টার্মিনাল করতে চাই। কয়লা এনে ওখানে রাখা হবে, ওখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাবে। এটা নির্মাণের ফিজিবিলিস্টি স্টাডি হয়েছে। জাপান ও আমাদের দেশের বেসরকারি কোম্পানি এটা নির্মাণের চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছে। আমরা কোন কোম্পানিকে প্রতিযোগিতামূলক দামে এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নিয়োগ দিতে পারব।’

আরও আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছরও প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াটের উপরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জেনারেশনের জন্য সিস্টেমে যোগ করব। আমাদের বড় পরিকল্পনা হচ্ছে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন। আরও তিনটি বছর লাগবে, সেক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবো। আমাদের অনেক সাব-স্টেশন, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল এই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িত।’

শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করাও সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ বলেও জানান নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘বাসাবাড়ি এবং ইন্ডাস্ট্রিতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। আমি বলব না যে, খুবই ভালো অবস্থা। ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা সহজভাবে বলতে পারব গ্যাস ও বিদ্যুতে আরও ভালো অবস্থায় পৌঁছেছি।’

আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে সরকার তরল জ্বালানি নির্ভর ও অলাভজনক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বেরিয়ে আসবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আসছে

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে আমাদের চাহিদা হলো বিদ্যুৎ খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকার উপরে। জ্বালানি খাতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার উপরে। বিদ্যুৎ খাতে এডিপির বরাদ্দ পেয়েছিলাম ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো। এবার ২৬ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি, সেটাই আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সবসহ এবার ২৯ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বাজেট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে হবে।’

আগামী অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে কী পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হবে- জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা মনে করছি, গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হলে বিদ্যুতের দাম খুব বেশি বার্ডেন হবে না, দামের উপর চাপ পড়বে না। কারণ হলো বিদ্যুতের যে ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে তেল ও গ্যাসের সমন্বয়ে চলতে আমরা তেল বন্ধ করে গ্যাস দিয়ে চালাতে পারব। সেক্ষেত্রে দামের ব্যালেন্স হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যে পরিমাণ সাবসিডির দরকার হয়, আমার মনে হয় না খুব অতিরিক্ত দরকার হবে। গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যে পরিমাণ আমরা নিই, সেই পরিমাণ থাকলেও আমরা কমফোর্ট ফিল করব, যদি বার্ক দাম সমন্বয় করে।

আরএমএম/এএইচ/জেএইচ/এমএস