অমর সব সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামকে পাওয়া যায় একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবেও। চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং গানও গেয়েছেন।
Advertisement
শুধু তাই নয়, বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসেন নজরুল। ১৯৩৩ সালে গড়ে তুলেছিলেন তিনি পায়োনিয়ার ফিল্মস কোম্পানি নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারেই ‘ধ্রুব’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা ‘ধ্রুব চরিত’ অবলম্বনে। ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি ‘ধ্রুব’ ছবিটি মুক্তি পায়।
এছাড়াও হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে প্রায় ২০টি চলচ্চিত্রে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন নজরুল। এর কোনোটাতে তিনি গান করেছেন, কোনোটাতে গান লিখেছেন, আবার কোনোটাতে শুধু সুর করেছেন। বলা চলে এই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের শুরুর দিকেই নিজেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
তারমধ্যে একটি ছবিতে তিনি সুর করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে। বিশ্বকবির উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৩৮ সালে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘গোরা’। ত্রিপুরার চলচ্চিত্র নির্মাতা নরেশ চন্দ্র মিত্র ছবিটি নির্মাণ করেন। সে ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল।
Advertisement
এই ছবিতে নজরুলের কাজ করাটাকে পছন্দ করেননি অনেক রবীন্দ্র সমর্থকেরা। বিশ্বভারতী তো আনুষ্ঠানিকভাবেই আপত্তি করে বসে যে ছবিটিতে সঠিকভাবে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া হচ্ছে না। নজরুলকে যেন এই কাজ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এতে ক্ষেপে যান নজরুল। বিরক্ত হয়ে তিনি সরাসরি হাজির হন কবিগুরুর সামনে। জানান সব বিস্তারিত। সব শুনে রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে সমর্থন করেন এবং বিশ্বভারতীর সমালোচনা করে বলেন, ‘আমার গান কীভাবে গাইতে হবে সেটা কি তোমাকে শেখাবে ওরা? তুমি গান ব্যবহার করো তোমার মতো করে।’
তিনি নজরুলকে তার গান নিজের খুশিমতো গাইবার ও ব্যবহারের অনুমতিপত্র দিয়ে দেন। তারপর নজরুল স্বাধীনতা নিয়ে কবিগুরুর গানে সুর করেছেন। ‘গোরা’ ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার হয়েছিল নজরুলের নিজস্ব শৈলীতে, যা প্রশংসিত হয়েছিল শ্রোতাদের মাঝে।
এই ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি নিজের লেখা একটি গান এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্দে মাতরম’ গানটিও ব্যবহার করেন নজরুল।
Advertisement
এলএ/জেআইএম