আন্তর্জাতিক

হোটেলে বাসন মাজতেন রাহুলকে হারানো স্মৃতি ইরানি

কংগ্রেস সভাপতি ও গান্ধী পরিবারের সন্তান রাহুল গান্ধী এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কেন্দ্রীয় টেক্সটাইল বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে গেছেন। গত পঞ্চাশ বছর ধরে গান্ধী পরিবারের দখলে থাকা সে আসনে রাহুলকে পরাজিত করা স্মৃতি ইরানি এক সময় মুম্বাইয়ের হোটেলে বাসন মাজতেন।

Advertisement

নেহেরু-গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের ওই আসনটি আমেথি। রাহুলের বাবা ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ওই আসন থেকে জিতেই ক্ষমতায় বসেছিলেন। রাহুল গান্ধী মোট ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩০৫টি। স্মৃতি ইরানি পেয়েছেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৩টি ভোট।

ভারতের এক সময়ের মডেল, টেলিভিশন অভিনেত্রী এবং প্রযোজক স্মৃতি ইরানি নিজেই হোটেলে কাজ করার কথা স্বীকার করেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদির বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পাওয়ার পর তার এ পেশার কথা জানান ইরানি।

আরও পড়ুন>> নিজের আসনেও হেরে গেলেন রাহুল

Advertisement

২০১৫ সালে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে স্মৃতি বলেন, ‘আপনি পানির কলের মিস্ত্রিই হোন বা মেকানিক হোন, কোনো কাজেই লজ্জা থাকা উচিৎ নয়। আমি একজন মন্ত্রী হয়ে বলতে পারি, আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমি মুম্বাইয়ের হোটেলে হোটেলে বাসন মাজার কাজ করেছি।’

মানুষের জন্য কোনো কাজ ছোট নয় এবং সব কাজকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কাজ যাই হোক না কেন কখনো সেটাকে মোটেই ছোট মনে করবেন না। আপনার চারপাশের মানুষ যখন আপনার কাজকে মূল্যায়ন করবে তখন যেকোনো কাজ হবে সম্মানের।’

স্মৃতি ইরানি এক সময় ভারতে বেশ জনপ্রিয় একজন টিভি অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি হিন্দি এবং বাংলাসহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে মোদির সরকার তাকে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় অনেকে স্মৃতি ইরানিকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া নিয়ে সমালোচনা করেন।

আরও পড়ুন>> হার মেনে নিলেন রাহুল, অভিনন্দন জানালেন মোদিকে

Advertisement

শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তিনি এফিডেফিট করে দেখান যে, তিনি একজন স্নাতক সম্মান ডিগ্রিধারী। তার এমন দাবির পর তুমুল অসন্তোষ তৈরি হয়। হাইকোর্ট পর্যন্ত ঘটনাটি গড়ায়। পরে ২০১৬ সালে মোদি তাকে মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী থেকে সরিয়ে টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।

ইরানি ভারতের রাজ্যসভার একজন সংসদ সদস্য হিসেবে গুজরাট প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি গত নির্বাচনেও আমেথি আসন থেকে লড়ে রাহুল গান্ধীর কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরে যান। তাই এবার কোমর বেধে তিনি নেমে পড়েন নির্বাচনী প্রচারে।

বিরোধীরা অবশ্য অন্যরকম কথা বলছেন। ভারতজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় চষে বেড়ালেও আমেথিকে রাহুল গান্ধী তেমন গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ বিজেপির। দেশটির ক্ষমতাসীন এই দল বলছে, রাহুল গান্ধী আমেথি আসনকে অবহেলা করেছে।

২০০৪ সাল থেকে এই আসনে নির্বাচিত হয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু এবার ‘পৈতৃক’ এই আসনে রাহুলের এমন পরাজয়ের পর প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ এশিয়ার নামকরা নেহেরু-গান্ধী পরিবার এবার কী তাহলে তাদের রাজনৈতিক একচ্ছত্র আধিপত্য হারাতে বসেছে?

এসএ