দেশজুড়ে

মানবপাচারে জড়িত সিলেটের ২৪ ট্রাভেলস এজেন্সি

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ট্রলার ডুবিতে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের ১৬ তরুণের প্রাণহানির ঘটনার পর সিলেটের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

Advertisement

এ সময় ট্রাভেলস এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে মানবপাচারের দায়ে সিলেটের ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার দিনভর জেলা প্রশাসনের পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলেটের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে এ অভিযান চালায়।

এ সময় বৈধ কাগজপত্র না থাকা, বিদেশে পাঠানোর নামে অবৈধপথে মানবপাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ২৪টি ট্রাভেল এজেন্সিকে পৌনে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আরও পড়ুন >> ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ২৭ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে সিলেটের ছয় যুবক নিহতের পর মানবপাচারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ট্রাভেলস এজেন্সির নামে অবৈধভাবে বিদেশ লোক পাঠানোর ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে সিলেট জেলা প্রশাসন। সোমবার ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি টিম গঠন করে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়।

অভিযানে ২৪টি ট্রাভেলস এজেন্সিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয় ও মোট চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটি থেকে তিন জন মানবপাচারকারী আটক করা হয়। তাদেরকে একমাসের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল চৌধুরী।

আরও পড়ুন >> বড়লোক হওনের নেশায় ছেলেটারে হারাইলাম

Advertisement

এদিকে, আম্বরখানা এলাকায় অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরতিজা হাসান। অভিযানে আবু সাইদ এন্টাপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা, ট্রাভেল টাইমকে ২৫ হাজার টাকা, জিলানী এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ৫ হাজার টাকা, মিরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ২০ হাজার টাকা, জে স্কয়ার কনসালটেন্সিকে ২০ হাজার টাকা, রেঞ্জার ইন্টারন্যাশলকে ২০ হাজার টাকা ও নিউ জান্নাত ট্রাভেলসকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

একই সঙ্গে ট্রাভেলস কর্মচারী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ১৫ দিনের ও নাজমুল ইসলাম খানকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হকের নেতৃত্বে উপশহর এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

আরও পড়ুন >> ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ১৫ জনই সিলেটের

এ অভিযানে রোজভিউ কমপ্লেক্সের আবিদ ওভারসিজকে ২০ হাজার টাকা, আসসালাম হজ্জ এবং ওমরাকে (প্যারাডাইস) ১৫ হাজার টাকা, আলকেফাকে ২০ হাজার টাকা, খাজা এয়ার ইন্টান্যাশনাল সর্ভিসকে ২০ হাজার টাকা ও হোয়াইট ট্রাভেলসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন খান বলেন, শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ট্রাভেল এজেন্সি। এসব ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। চোরাই পথে মানুষকে পাঠিয়ে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। তাই অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যতদিন এসব অপকর্ম বন্ধ না হবে, ততদিন অভিযান চলতে থাকবে।

আরও পড়ুন >> ‘বাঁচার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম’

তিনি বলেন, নগরের উপশহর, বন্দরবাজর, আম্বরখানা, জল্লারপাড়, জিন্দাবাজার এলাকায় পাঁচটি টিম অভিযান চালিয়েছে। প্রতিটি টিমে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তাদের সহযোগিতা করেছেন আটাব নেতারা।

প্রসঙ্গত, ৯ মে দালালদের মাধ্যমে সাগরপথে ইতালি প্রবেশ করতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে প্রাণ হারান সিলেটের ১৬ জন যুবক। এর মধ্যে সাতজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তাদেরকে ইতালি পাঠানোর জন্য ৮ লাখ টাকার চুক্তি করেছিলেন রাজা ম্যানশনের ইয়াহিয়া ওভারসিজ নামক এজেন্সির মালিক এনামুল হক। এ ঘটনার পরই অবৈধ ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

ছামির মাহমুদ/এএম/এমএস