অর্থনীতি

এসিআই’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আজ বৈঠকে বসছে ডিএসই

বছরের পর বছর ধরে রিজার্ভ থেকে সাবসিডারি (সহযোগী) কোম্পানির লোকসান বহন করে লোকসানের খাতায় নাম লেখানো এসিআই লিমিটেডের বিরুদ্ধে করণীয় ঠিক করতে আজ (রোববার) বৈঠকে বসছ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত কমিটি।

Advertisement

ডিএসইর প্রাঙ্গণে দুপুর ১২টায় এ বৈঠক শুরু হবে বলে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকের মাধ্যমে এসিআই’র বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরবে তদন্ত কমিটি।

বৈঠকের বিষয়ে রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এসিআই’র কাছে আমরা ব্যাখ্যা চেয়ে ছিলাম, তারা উত্তর দিয়েছে। তদন্ত কমিটির বৈঠকে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেয়া হবে। সেখানে এসিআই’র বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় তা উল্লেখ করা হবে। আইন অনুযায়ী ডিএসইর যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে, সেই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ জন্য আইনি বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে গত ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।

Advertisement

ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী।

তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, তাদের কাছে মনে হয়েছে এসিআইয়ের সাম্প্রতিক বছরগুলোর আর্থিক বিবরণী মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ। এটি মারাত্বক অনৈতিক কাজ। ভবিষ্যতে যাতে কোনো কোম্পানি এ ধরনের অনৈতিক কাজ করতে না পারে সে জন্য এসিআই’র বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হবে।

তদন্ত কমিটির ওই সদস্যরা বলেন, এসিআই লিমিডেট তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি। এর পরিচালকরা যা ইচ্ছা খুশি তাই করতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে রিজার্ভ থেকে সাবসিডারি (সহযোগী) কোম্পানির লোকসান বহন করবে তা হতে পারে না। এ ধরনের অনৈতিক কাজ বন্ধ হওয়া উচিত। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটির সুপারিশ তুলে ধরা হবে।

তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, এসিআই’র সাম্প্রতিক গতিবিধি সন্দেহজনক। ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের নামে ৯০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বিষয়টা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য তো নয়ই। আমাদের সন্দেহ, এসিআই-এর মালিকেরা স্বপ্নের লোকসান দেখিয়ে কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, এসিআই গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এটা মেনে নেয়ার মতো বিষয় নয়। স্বপ্ন যদি সত্যিই এত লোকসান দিয়ে থাকে, তাহলে এসিআই কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সেটি বন্ধ করে দেয়া। এটি ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি নয় যে, মালিকরা যা খুশি তা করবেন। এটি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডাররাও এ কোম্পানির একাংশের মালিক। তাদের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অধিকার কারো নেই।

গত জানুয়ারিতে এসিআই চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোম্পানিটি পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ার প্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা।

আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসিআই’র লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ডিএসইতে আবেদন জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতেই ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসিআই-এর আর্থিক বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এমএএস/এসএইচএস/এমএস