জাতীয়

কেমিক্যাল স্থানান্তর প্রকল্পে অগ্রগতি শূন্য, ব্যয় বাড়ল ৮ গুণ

পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে কেমিক্যাল গোডাউন বিস্ফোরণের কথা অনেকেরই মনে আছে। ২০১০ সালের ওই বিস্ফোরণে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অনেকে এবং সম্পদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধসহ আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল/গোডাউন অপসারণের লক্ষ্যে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। প্রায় ১০ মাস পার হতে চললেও সেই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি এখন পর্যন্ত শূন্য।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সংশোধনের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রকল্পে বলা হয়েছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ আগুনের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক এলাকায় অবস্থিত সব রাসায়নিক কারখানা/গোডাউন স্থানান্তরের লক্ষ্যে স্থাপনাধীন বিসিক কেমিক্যাল পল্লীটি আরও বড় পরিসরে এবং তুলনামূলক কম জনবহুল এলাকায় স্থাপনের প্রয়োজনিয়তা দেখা দেয়।

পুরাতন ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনগুলো একটি পরিবেশবান্ধব ও অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল স্থানে স্থানান্তর/স্থাপনের লক্ষ্যে সবধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার উদ্দেশে এই প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে।

Advertisement

সংশোধিত প্রকল্পে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা’ পরিবর্তে প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (প্রথম সংশোধিত)’। সংশোধিত প্রকল্প থেকে জানা যায়, এর বাস্তবায়নের সময় বেড়ানো হয়েছে এক বছর। আর প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় আটগুণ।

প্রথমে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সংশোধনের পর এই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে এক হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

বাড়তি ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে বলেছেন, আমরা যাদের জমি নেব, তাদেরকে তিনগুণ দাম দিতে হবে। তিনগুণ দাম দেয়ার কারণে সমস্ত কিছুই বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের এলাকাও বেড়েছে।’

প্রথমে প্রকল্পটি ঢাকার কেরাণিগঞ্জে ৫০ একর জমিতে করার কথা ছিল। সেই স্থান পরিবর্তন করে এখন প্রকল্পটির হচ্ছে ঢাকা-দোহার সড়ক বরাবর মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার তুলশিখালী ব্রিজসংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা নামক তিনটি মৌজার মোট ৩১০ একর জমির ওপর। এই জমিতে দুই হাজার ১৫৪টি শিল্পপ্লট তৈরি করা হবে।

Advertisement

প্রাক্কলিত প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। সংশোধন করে এর সময় বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প শুরুর পর আরএডিপিতে ৪৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি বিসিক।

একনেক সভাপরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিকের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক সংবাদকর্মী বলেন, ‘‘বিসিক’কে সবাই ঠাট্টা করে বলে ‘বি সিক’’। কারণ হচ্ছে সাভারে চামড়াশিল্প নগরী স্থানান্তরের কাজটি বিসিক সফলভাবে করতে পারেনি। আপনি কি মনে করেন, কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্টিও করা সম্ভব হবে বিসিকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে?’

এর জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বলা ঠিক না। যদিও চামড়া শিল্পের অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়। তবে এক মেঘে বর্ষা হয় না। সম্ভবত তারা পারবে। শোনেন, এসব ভবিষ্যৎ নিয়ে না ভাবাই ভালো।’

এ সময় আরেক সাংবাদিক জানতে চান, ‘ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই প্রকল্প করবেন?’ তখন মন্ত্রী কিছু কথা বলেন ‘অফ দ্য রেকর্ড’। অর্থাৎ এগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।’

পিডি/বিএ