বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্ষবরণ উদযাপনে মেতে ওঠে সারাদেশবাসী। রাজধানীর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু রমনার বটমূলে রোববার ভোর থেকেই ভিড় করতে থাকেন রাজধানীবাসী। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ ভিড় বাড়তে থাকে।
Advertisement
রমনার বটমূলের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে। ঘর ছেড়ে বের হয়ে সেই উদযাপনে সামিল হচ্ছেন উৎসবপ্রেমীরা। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই আছে এ তালিকায়।
সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনে সবাই মেতে উঠলেও কিছুটা যেন নির্দয় হয়েছে সূর্যি মামা। সকাল থেকেই সূর্যের প্রখর তাপ কিছুটা বাগড়া দেয় বৈশাখী উৎসবে। ভ্যাপসা গরমে উৎসবপ্রেমীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। তারপরও সূর্যের প্রখর তাপ তেমন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না নগরবাসীর বৈশাখ উদযাপনে।
ভ্যাপসা গরমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উৎসবপ্রেমীরা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মেতে উঠেছেন উৎসব আনন্দে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সেই সঙ্গে চলছে বাতাসা, গজা, মুড়িমুড়কি, তরমুজ জিলাপি খাওয়ার ধুম।
Advertisement
ঘর ছেড়ে বৈশাখ উদযাপনের জন্য বের হওয়াদের তৃষ্ণা মেটাতে ফ্রি পানি বিতরণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সংস্থা। এ তালিকায় রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনও।
পল্টন, কাকরাইল, সেগুনবাগিচাসহ রমনার আশপাশের এলাকায় ট্রাকে করে সাঈদ খোকনের পক্ষ থেকে ফ্রি পানির বোতল বিতরণ করা হচ্ছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেগুনবাগিচায় সাঈদ খোকনের ছবি ও নামসহ ব্যানার ঝোলানো একটি ট্রাক থেকে কয়েকজন যুবককে পানি বিতরণ করতে দেখা যায়।
এদের একজন নিজেকে রাফি পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘বৈশাখে প্রচণ্ড গরম থাকে। গরমে অনেকের গলা শুকিয়ে যায়। কিন্তু সব সময় হাতের কাছে পানি পাওয়া যায় না। তাই মেয়রের পক্ষ থেকে আমরা ফ্রি পানি বিতরণ করছি। যার পানি প্রয়োজন হবে আমাদের কাছে আসলেই পানি পাবেন।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে পানি বিতরণ করছি না। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে তৃষ্ণার্তদের পানি দিচ্ছি। আমাদের পানির অভাব নেই। একবার ট্রাকের পানি ফুরিয়ে গেলে আবার পানি নিয়ে আসব।’
ট্রাকটি থেকে বেশ কয়েকজনকে পানির বোতল সংগ্রহ করতে দেখা যায়। এদের একজন কামরুল বলেন, ‘১০-১৫ মিনিট ধরে হাঁটতে হাঁটতে গলাটা শুকিয়ে গেছে। পানি খুঁজে কোথাও পাচ্ছিলাম না। এমন সময় ট্রাকটি সামনে আসল। ট্রাক থেকে পানির বোতল নিয়ে তৃষ্ণা মেটালাম।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই আকাশে মেঘ বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আজ সকাল থেকেই সূর্য টগবগ করে ফুটছে। ফলে গরম পড়ছে প্রচণ্ড। ১০-১৫ মিনিট একটানা হাঁটলেই যেন দম বেড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হচ্ছে। ঘন ঘন গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিবেশে যারা ফ্রি পানি বিতরণ করছে তাদের জন্য দোয়া তো করতেই হয়।’
এদিকে রমনা পার্কের ভেতরে স্টল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পানির বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে আসা নারী-শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের হাতে তুলে দিচ্ছেন পানি। অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুকে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে স্টলের সামনে গিয়ে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
নর্ববর্ষের শুভেচ্ছা সংবলিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে এসব পানি। যদিও এ পানি রাখা হয়েছে মূলত নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য। তারপরও সেখানে থেকে পানি নিয়ে খাচ্ছেন সবাই।
তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি পার্কের বাইরে শিশুদের লাল গোলাপ ও বড়দের হাতে বাতাসা দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬-এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অন্যদিকে, র্যাবের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সামিয়ানা টাঙিয়ে মানুষের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এমএএস/এনডিএস/জেআইএম