জাতীয়

আনন্দ আয়োজনে পালিত হচ্ছে নববর্ষ

দেশ জুড়ে নানা আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। সামাজিক সব অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানস নিয়ে প্রভাতী আয়োজনে বছরটি বরণ করে ছায়ানট। রোববার (১৪ এপ্রিল) রমনার বটমূলের প্রভাতী আয়োজনে ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’ আহ্বান নিয়ে সাজানো হয় এ অনুষ্ঠান।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবদ্য’ রচনার বাণী থেকে ওই পংক্তিকে প্রতিপাদ্য করেই ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এরও আগে শনিবার রাতে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আলপনার রঙে বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়। কঠোর নিরাপত্তা ও নানা নিয়মকানুনের বেড়াজালের মধ্যে দেশবাসী উদযাপন করছে নতুন বছরকে। লাল-সাদা পোশাকে কিংবা বাঙালির প্রিয় পোশাক পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে সব বয়সী নারী-পুরুষরা আনন্দে মেতেছেন। শহর ছাড়াও গ্রামীণ মেলা তো রয়েছেই। সেই মেলার ঢাক, ঢোল, নৃত্য, গান উৎসবের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলা নববর্ষকে বরণ করার জন্য দিনভর নানা অনুষ্ঠান ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও জাতীয় সংসদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নানা শিল্প সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ঘরে ঘরে চলছে সাধ্যমত বাঙালি খাবারের উৎসব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধনের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ শিশুপার্ক ঘুরে এসে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়। বাংলাদেশের এ মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

Advertisement

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে উৎসবের নানান মাত্রা দেখা গেছে। বৈশাখের প্রখর রোদও এ উৎসবকে ম্লান করতে পারেনি। বরং কয়েকদিন ধরে হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি থেকে রেহায় পেয়ে মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। রাজধানীর রাস্তাগুলো ফাঁকা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়গামী রাস্তাগুলোতে যানবাহনের বাড়তি ভীড় দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর হাতিরঝিল, ধানমন্ডির লেক, রবীন্দ্র সরোবর, পুর্বাঞ্চল এলাকায় অনেকে ঘুরতে গেছেন।

রাজধানীর হাতিরঝিলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গেছেন সাখাওয়াত সাকিব। তারা পাঁচবন্ধু একই রঙের পাঞ্জাবি পরেছেন। দুপুরে জাগো নিউজের কাছে তিনি জানান, সারাদিন তারা বিভিন্ন জায়াগায় ঘুরবেন ও ছবি তুলবেন।

ধানমন্ডির লেকেও অনেকে ঘুরতে গেছেন। সেখানে কথা হয় নন্দিনা দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ সার্বজনিত একটি উৎসব। এ জন্য তিনি পরিবার নিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঘুরতে বের হয়েছেন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে, কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

Advertisement

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

এইচএস/আরএস/এমকেএইচ