অর্থনীতি

অবৈধ গ্যাসলাইন কাটতে গেলে তদবির আসে : জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

বকেয়া বিল আদায় ও অবৈধ গ্যাসলাইনের সংযোগ বিছিন্ন করতে গেলেই উপর মহল থেকে তদবির আসে বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, অনেক অবৈধ সংযোগ রয়েছে। আমরা বকেয়া বিল আদায় ও অবৈধ গ্যাসলাইনের সংযোগ বিছিন্ন করতে গেলেই সমস্যা। উপর মহল থেকে তদবিরের জন্য ফোন আসে। আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, অনেক শ্রমিক বেকার হবে। এসব বিবেচনা করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারি না।

Advertisement

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ : শিল্পখাতে এর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস যেহেতু প্রাকৃতিক সম্পদ, কাজেই এর যথাযথ এবং পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি বলেন, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খাতে সরকার বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দেয় অথচ এই দুই খাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা (১০ এপ্রিল পর্যন্ত)। এর মধ্যে বিদ্যুতে বকেয়া ৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা আর গ্যাসে ৬ হাজার কোটি টাকা। নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকেই গ্যাস ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং এজন্য গ্যাস ব্যবস্থাপনার একটি মহাপরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে। তবে গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা, খরচ এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্তির বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ বা ন্যূনতম লাভজনক হচ্ছে কীনা-তা যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মন্ত্রী বলেন, গ্যাসক্ষেত্রের কূপ খননের বিষয়টি মোটেও সহজসাধ্য বিষয় নয়। এ কাজের জন্য বিপুল পরিমাণে অর্থের পাশাপাশি সময় প্রয়োজন এবং সেই সঙ্গে প্রাপ্ত গ্যাসের পরিমাণ খরচ ও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কী না- তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

Advertisement

এ সময় এক পরিসখ্যান তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০০ এমএমসিএফডি, উৎপাদন হচ্ছে ২৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস এবং দেয়া হচ্ছে প্রায় ৩৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাস।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নিজস্ব গ্যাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি ২.৫৭ টাকা। নিজস্ব কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের জন্য খরচ পড়বে ৬ টাকা, অন্যদিকে আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা বিদ্যুতের খরচ পড়ছে ইউনিটপ্রতি ৮.১০ টাকা।’

তিনি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক এলাকায় শিল্পোদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানা স্থাপন না করে প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শিল্প-কারখানা স্থাপন ও স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হলে সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে জানান। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি ওসামা তাসীরের সভাপতিত্বে আলোচনায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অধিকতর চাপসম্পন্ন গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত মূল্য বৃদ্ধির হার কার্যকর হলে, শিল্পখাতের উৎপাদন খরচ বাড়বে, বিশেষ করে সার, বস্ত্র, ডেনিম, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, স্টিলসহ বিভিন্ন খাতে প্রভাব পড়বে। বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে স্বল্পমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।

Advertisement

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্তন সচিব ড. এম ফওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের প্রস্তাবিত মূল্য বৃদ্ধি করা হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৯৩.৭৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি টেক্সটাইল, সিমেন্ট ও স্টিল খাতে যথাক্রমে ১৮.০৬ শতাংশ, ১.৯৩ শতাংশ এবং ৭.৩৭ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। তিনি অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, এলপিজি ব্যবহারকে উৎসাহিত করা এবং পিক ও অফপিক সময়ে আলাদা ট্যারিফ (শুল্ক) প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন।

এসআই/এসআর/এমকেএইচ