ধর্ম

ইসলামের আলোকে সুস্থ থাকবেন যেভাবে

সুস্থ শরীর ও মন মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। তাই সুস্থ থাকতে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কেননা ‘রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা উত্তম’। এটা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম স্লোগানও বটে। এ জন্য সুস্থ থাকতে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

Advertisement

মানুষের প্রতি স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ হিসেবে ৭ এপ্রিল নির্ধারণ করে। এ ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশেও ‘সমতা ও সংহতি নির্ভর সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনামে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।

মানুষের সুস্থ দেহ ও মানসিক প্রশান্তি লাভে ইসলামেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্থতার প্রতি মর্যাদা দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি অবস্থার আগে পাঁচটি অবস্থাকে মর্যাদা দিতে হবে। তন্মধ্যে একটি হলো- ‘অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে মর্যাদা দাও।’ কেননা সুস্থতা হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য গণীমত।

মানুষের শরীরে যাতে রোগের উৎপত্তি না হয়, সে বিষয়ে নসিহত পেশ করেছেন বিশ্বনবি। তিনি বলেন-- ‘হে মুহাজির সম্প্রদায়! এমন পাঁচটি অভ্যাস রয়েছে, সেগুলো যেন তোমাদের মধ্যে পাওয়া না যায়। সে জন্য আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘অশ্লীলতা’। যখন কোনো জাতি অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ে কিংবা তার মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ পায়। তখন তাদের মাঝে প্লেগসহ বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি মহামারী আকারে দেখা দেয়। যে রোগের কথা পূর্বপুরুষদের কেউ আগে কখনো শোনেনি।

Advertisement

পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণেও মানুষ রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। পরিবেশ যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তখন এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আর তাতে মানুষ অসুস্থতায় পতিত হয়। এ কারণে পরিবেশ বিপর্যয়কে গোনাহের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘জলে- স্থলে মানুষের কৃতকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (অন্যায়-অনাচার-জুলুম থেকে) ফিরে আসে। (সুরা রুম : আয়াত ৪১)

তাইতো সুস্থ থাকতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ঈমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি।’ (ইবনে মাজাহ)

সুস্থতা ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাঅনেক কারণে মানুষের সুস্থ থাকা জরুরি। বিশেষ করে ইসলাম সুস্থ থাকার গুরুত্ব অত্যাধিক। আল্লাহর হুকুম পালনে কিংবা ইসলামের বিধি-বিধান বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। তাই সুস্থ না থাকলে ইসলাম বিধান বাস্তবায়নও সম্ভব নয়।

আবার ইবাদত-বন্দেগির জন্যও সুস্থ থাকা আবশ্যক। কারণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ছাড়া ইবাদত-বন্দেগি করাও সম্ভব নয়। হাদিসে এসেছে-‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ।’ (মুসলিম)

Advertisement

অন্য হাদিসে এসেছে-‘অধিকাংশ মানুষ দুটি নিয়ামত সম্পর্কে সচেতন নয়। আর তাহলো- সুস্থতা এবং অবসর।’ (বুখারি)

পরকালে আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ সুস্থতার সময় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করবেন। প্রত্যেক বান্দাকেই জিজ্ঞাসা করা হবে- ‘আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দেইনি?’ (তিরমিজি)

সুতরাং যদি কোনো বান্দা অসুস্থ হয়ে যায় তবে তাকে চিকিৎসা গ্রহণ করাও জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। লোকদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। চিকিৎসা গ্রহণ সম্পর্কে প্রিয় নবি বলেছেন-- ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা মহান আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তাহলো বার্ধক্য।’(আবু দাউদ)

মনে রাখতে হবে ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের নির্দেশও বটে। আর তাহলো-- হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি একবার অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এসে তার হাত মোবারক আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি অন্তরে এর শীতলতা অনুভব করি। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছ। তুমি ছাকিফ গোত্রের হারেস ইবনে কালদার কাছে যাও। সে (এই রোগের) চিকিৎসা করে।’ (আবু দাউদ)

- বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা রোগ দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করবে না।’

- তিনি আরো বলেন, ‘হারাম বস্তুতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’

সুতরাং সুস্থতায় চিকিৎসা গ্রহণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নসিহত হোক মুমিন মুসলমানের অনুপ্রেরণা। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সুস্থ থাকা, চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং অসুস্থ ব্যক্তির সেবায় আত্মনিয়োগ করা হোক ঈমানের একান্ত দাবি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে নিজেদের সুস্থতায় সচেতন হওয়া জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থ থাকার কুরআন-সুন্নাহর উপদেশ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম