২০ দিনের ব্যবধানে গত ফেব্রুয়ারিতে ঠাকুরগাঁওয়ে একই পরিবারের যে পাঁচজন মারা গেছেন তারা কোনো অজ্ঞাত রোগে নয়, বাদুরবাহিত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআর-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
Advertisement
আজ (রোববার) আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত ডিজিজ সার্ভিল্যান্সে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।
রোগের কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি টিম পাঠায়। পরবর্তীতে আরও চার সদস্যের আরেকটি টিম তাদের সাথে যোগ দেয়।
Advertisement
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন তারা।
হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবার, প্রতিবেশী, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ করেন দলের সদস্যরা।
রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সকলের জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ওই নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি এবং তাদের স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে আইইডিসিআর।
বাদুড়ের খাওয়া খেজুরের রসের মাধ্যমে ও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
Advertisement
আইইডিসিআরের তদন্ত দল প্রথম মৃত ব্যক্তির খেজুরের কাঁচারস পানের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলেও পরে আরও যে চারজন মারা যান তারা প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে ধারণা করছে।
আইইডিসিআর সবাইকে খেজুরের কাঁচারস পানে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের নিপাহ্ সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (মাস্ক ও গ্লাভস) নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানের পরামর্শ দিয়েছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর হাত সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ রকম রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের সম্পূর্ণ পৃথক স্থানে রাখা ও পৃথক স্থানে সেবা প্রদানের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
রোগীর মৃত্যু হলে তার দাফন-কাফন নির্দেশিত নিয়ম মেনে করতে হবে, যাতে মৃত রোগির লালা/রক্ত/মল/মূত্রের সরাসরি সংস্পর্শে অন্য কেউ না আসে। মাস্ক ও গ্লাভস পরে নির্দেশিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৃতদেহ গোসল করাতে হবে।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম মারা যান আবু তাহের (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। আবু তাহের বয়স্ক হওয়ার কারণে বিষয়টি তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি তার পরিবার।
এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি আবু তাহেরের জামাই হাবিবুর রহমান বাবলু (৩৫) একইভাবে আক্রান্ত হন। পরদিন সকালে ৯টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বাবলুর মৃত্যু হলে জামাইয়ের সেই মৃত্যুর সংবাদ শোনার কিছুক্ষণ পর আবু তাহেরের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৪৫) মারা যান।
২০ ফেব্রুয়ারি একই রোগে আক্রান্ত হন আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪)। তাদের দু’জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে সকালে ইউসুফ এবং রাতে সাড়ে ৯টার দিকে মেহেদী মারা যান।
এমইউ/এনএফ/জেআইএম