নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা কবিতাকে দিয়েছেন নতুন দিশা। দৈনন্দিন কথ্য বুলিকে তিনি অনায়েসে যেমন কবিতা করে তোলেন তেমনি জীবন ও জগতের নিগূঢ় দর্শনকে কবিতার মধ্য দিয়ে বাক্যময় করেছেন। শুক্রবার বিকেল ৪টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
Advertisement
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক এবং সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, পূর্ববাংলার মানুষ নীরেন্দ্রনাথ তার আপন মৃত্তিকাকে কখনও বিস্মৃত হননি। তার কবিতায় এবং অন্যান্য লেখায় বারবার ফিরে এসেছে পূর্ববাংলার মাটি ও মানুষের কথা।
তারা বলেন, কবিতাকে একই সঙ্গে শৈল্পিক মানসম্পন্ন এবং সাধারণ মানুষের যোগাযোগক্ষম করে তুলতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাধনা বাংলা কবিতার পাঠক চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
Advertisement
প্রাবন্ধিক বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাস্তব জগৎ শুধু প্রকৃতি নয়, মূলত মানুষকে ঘিরে; সময়ের মধ্যে হাঁটেন তিনি, মানুষময় ভাবনায় মগ্ন থাকেন। এই মানুষের সঙ্গে আসে সমাজের ক্ষত-ক্ষতি-তমসা, মানবতার সঙ্কট ও বিকৃতি। নীরেন্দ্রনাথ সেই কবি যিনি সন্ধ্যায় প্রত্যেককে তার নিজস্ব নারীর কাছে ফিরে আসার অমোঘ সত্য উচ্চারণ করেন। জীবন আর কবিতার মাঝখানে তিনি কোনো ব্যবধান রাখেন না। বলা হয়েছে, তিনি ছন্দকে চাবুক করে তুলেছেন, অক্ষরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-স্বরবৃত্তের বাঁধনে নিজেকে বাঁধেননি। কেননা নীরেন্দ্রনাথ নিত্য খুঁজে গেছেন, ছেঁকে তুলেছেন সেই জীবনকে সেই বাস্তবের মানুষ ও চারপাশকে যা ধারণ করে আছে নিহিত মানবিক সত্তা আর সেই সত্তার কথায়নে তিনি নান্দনিকতা বিনির্মাণ করেছেন। তার দীর্ঘ আয়ু, সৃষ্টিশীলতা আর যেন মৃত্যুও গেঁথে তুলেছে দীর্ঘ আলোর মতো হাহাকার আর প্রেমময় বহুস্তরগামিতাকে । এটাই তো কবিতার আরাধ্য। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা বাংলা কবিতার ভুবনে এক বিশেষ মাত্রা-সংযোজক। অতি সাধারণ বক্তব্য-বিষয়কে তিনি প্রায় আটপৌরে ভঙ্গিতে যেভাবে কবিতা করে তুলেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। এছাড়া কবিতা নিয়ে তার গদ্যও পাঠকের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
এমএইচ/এএসএস/এমবিআর