জাতীয়

৫০ আসনের ৪৭টিতে অনিয়ম : টিআইবি

>> নির্বাচনে প্রচুর ত্রুটি রয়েছে : সুলতানা কামাল>> নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ : ইফতেখারুজ্জামান >> বেশিরভাগ কেন্দ্র আওয়ামী লীগের দখলে থাকার অভিযোগ >> নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়নি

Advertisement

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল গত ৩০ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্য থেকে দৈবচয়নের (লটারি) ভিত্তিতে ৫০টি বেছে নেয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শুরু করে পর্যালোচনা। এতে ৫০টির মধ্যে ৪৭ আসনেই অনিয়ম উঠে এসেছে।

টিআইবির এই পর্যালোচনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পর্যালোচনাতথ্য তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রতিবেদন পাঠ করেন গবেষক দলের শাহজাদা এম আকরাম।

পর্যালোচনায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ৪০, জাতীয় পার্টি ছয়, বিএনপি এক, গণফোরাম দুই এবং অন্যান্য দল একটি আসনে জয়ী হয়েছে।

Advertisement

প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশের বেশিরভাগ কেন্দ্র আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের দখলে থাকার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়নি।

গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে ভোটের দিন ও  চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদক প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

৪৭ আসনে যত অনিয়ম

অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা ৪২ আসনে, জাল ভোট দেয়া ৪১ আসনে, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা ৩৩ আসনে, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট ৩০ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ২৯ আসনে, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ২৬ আসনে, ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা ২৬ আসনে, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ২২ আসনে, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো ২১ আসনে, ব্যালট বাক্স আগে থেকে ভরে রাখা ২০ আসনে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মারধর করা ১১ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ২৯ আসনে এবং ১০ আসনে কোনও এজেন্ট ছিল না।

Advertisement

ভোটের দিন সারা দেশে ২৪ জেলায় নির্বাচনী সহিংসতার ফলে ১৮ জনের মৃত্যু হয় এবং ২০০ জন আহত হন।

সুপারিশ

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য অংশীজনদের দলীয় প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে হবে; নির্বাচনে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনী আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও তার ওপর ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়া, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করা, নির্বাচন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহের জন্য অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের নির্বাচন ইতিবাচক নয়। এ জন্য আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রচুর ত্রুটি রয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে যাতে ত্রুটি না হয়, সেজন্য যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে।’

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি ছয়টি আসনে জয়ী হয়। গণফোরাম দুটি (এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং গণফোরামের নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে মোকাব্বির খান নির্বাচিত হন), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি (বাসদ) তিনটি আসন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ দুটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দুটি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন একটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটি আসনে জয়ী হন।

প্রদীপ দাস/জেডএ/এমকেএইচ