ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান ও আগে থেকে ব্যালট বাক্স ভরাট ও কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এখন পর্যন্ত ৪৩ প্রার্থীর ভোট বর্জনের খবর পাওয়া গেছে।
Advertisement
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় সারাদেশে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে টানা ৪টা পর্যন্ত। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সংঘর্ষে ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
নানা অভিযোগে ভোট বর্জন করলেন যারা
জামায়াতে ইসলামীর ২৬ প্রার্থীর ভোট বর্জন
Advertisement
ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান ও রাতেই বাক্স ভরার অভিযোগ তুলে জামায়াতে ইসলামী ২২ প্রার্থীর সবাই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
জামায়াতের ইসলামী প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকে ২২ জন এবং ৪ প্রার্থীর স্বতন্ত্রভাবে এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের ধানের শীষ প্রার্থীর ভোট বর্জন
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দি আ ন ম শামসুল ইসলামের পক্ষে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জাফর সাদেক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন।
Advertisement
রোববার দুপুরে সাতকানিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, আসনের সবগুলো কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার কারণে তারা ভোট বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। সব ভোটারকে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ভোট বর্জন করলেন বিএনপি প্রার্থী আনিসুর রহমান
মাদারীপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ আসনে ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রেই অনিয়মের অভিযোগ তোলেন তিনি।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এ আসনের সকল কেন্দ্রেই অনিয়মের মাধ্যমে সরকারদলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।’
শেরপুরের দুই আসনে বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শেরপুর-২ ও শেরপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী ফাহিম চৌধুরী এবং মাহমুদুল হক রুবেল। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
শেরপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেল অভিযোগ করেন, আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচনের দিন ভালো ভোট হবে। কিন্তু বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পুলিশের সহায়তায় আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারছে। এমন কারচুপি ও নগ্ন পক্ষপাতিত্বমূলক নির্বাচনের কারণে আমরা ভোট বর্জনসহ আমাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলাম।
ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ ভোট বর্জন করেছেন। পোলিং এজেন্টদের মারধর, ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কোনো কোনো কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোট বর্জনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভোট বর্জন করছি।
ময়মনসিংহে ঐক্যফ্রন্টের ৫ প্রার্থীর ভোট বর্জন
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ময়মনসিংহের পাঁচ প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দুপুর আড়াইটায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের চার প্রার্থী এ ঘোষণা দেন।
তারা হলেন- ময়মনসিংহ-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইন, ময়মনসিংহ-৫ আসনের জাকির হোসেন বাবলু, ময়মনসিংহ-৬ আসনের ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দীন আহমেদ, ময়মনসিংহ-৮ আসনে গণফোরামের এ এইচ এম খালেকুজ্জামান এবং ময়মনসিংহ-১১ আসনের ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। তারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে নেমেছিলেন।
তাদের অভিযোগ, জোর করে কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, মারপিট করা এবং গতরাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলার কারণে তারা নির্বাজন বর্জন করতে বাধ্য হন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেমনাথ দের নির্বাচন বর্জন
বাগেরহাট-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেমনাথ দে নির্বাচন বর্জন করেছেন। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ধানের শীষের পাঁচজন ও লাঙ্গলের একজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। রোববার ভোট শুরুর পর থেকে একে একে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরা হলেন- খুলনা-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ খান, একই আসনের মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সুনিল শুভ রায়, খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৫ ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
আরএস/এমকেএইচ