চীনের টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে কানাডা। গ্রেফতারের পর তাকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এ কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা চলছিল। তবে চীন এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, হুওয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাং ওয়ানজুকে কানাডায় গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ঐ কোম্পানির ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।
Advertisement
মাং ওয়ানঝুউ শুধু হুওয়াওয়ের একজন শীর্ষ নির্বাহীই নন, তিনি এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার কন্যা। ফলে তাকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু পশ্চিমা দেশ ইতোমধ্যে হুয়াওয়ের সাজ-সরঞ্জাম তাদের দেশের টেলিকম নেটওয়ার্কে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ ও ভয়ের ফলেই তারা এমনটা করছে।
চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধের মূল কারণ আসলে কী? কেন তারা এ কোম্পানি নিয়ে এত সন্দিহান? আসলেই কি এটি পশ্চিমা দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি না কি অন্যকিছু?
হুয়াওয়ে কী করে?
Advertisement
হুয়াওয়ে হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানিগুলোর একটি। মূলত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের যন্ত্রপাতি তৈরি করে তারা। এক্ষেত্রে তাদের আগে নকিয়া এবং এরিকসনের মতো কোম্পানির একচেটিয়া এ ব্যবসা ছিল। তবে হুয়াওয়ে তাদের ছাড়িয়ে গেছে।
সম্প্রতি নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি ছাড়াও হুয়াওয়ে স্মার্টফোনও তৈরি করতে শুরু করেছে। বিশ্বে মোবাইল ফোনের বাজারের ১৫ শতাংশ তাদের দখলে। কেবল মাত্র অ্যাপল এবং স্যামসাং তাদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠা হচ্ছেন রেন ঝেংফেই। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন সাবেক অফিসার তিনি। ১৯৮৭ সালে এ ব্যবসা শুরু করেন। হুয়াওয়ের সদর দফতর চীনের শেনজেনে। এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ এ কোম্পানিতে কাজ করেন। কোম্পানিটির মালিকানাও ৮০ হাজার কর্মীর হাতে।
হুয়াওয়ে নিয়ে উদ্বেগ কেন?
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা যেহেতু চীনের সামরিক বাহিনীর লোক ছিল, তাই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হতে পারে। বিশেষ করে যেভাবে এটি বিশ্ব পরিসরে একটি বিশাল কোম্পানি হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। অনেকে মনে করেন, হুয়াওয়ে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সব প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে, তাই এটিকে তারা ইচ্ছে করলে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে চীনে গত বছর পাস হওয়া একটি আইনের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করছে। ওই আইনে চীনের সব কোম্পানিকে দেশটির জাতীয় ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। ওই আইনের পর যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড তাদের দেশের স্থানীয় কোম্পানিগুলোর ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
কানাডাও হুয়াওয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখছে। ব্রিটেন এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু যু্ক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ রয়েছে। সূত্র : বিবিসি
আরএস/আরআইপি