দশম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন এবং পুনরায় দলে ফিরে আসেন মৌলভীবাজার-২ আসনের বর্তমান সাংসদ আব্দুল মতিন। গত ৫ বছরে কোটিপতি হয়েছেন তিনি। একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে হলফনামা দাখিল করেছেন এই সাংসদ। হলফনামায় পেশাও বদল করেছেন তিনি। ২০১৪-তে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিন্তু একাদশ নির্বাচনে উল্লেখ করেছেন কৃষি।
Advertisement
অপরদিক মৌলভীবাজার-৪ আসনের বর্তমান এমপি এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী আব্দুস শহীদের গত ১০ বছরে সম্পদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ষিক আয় আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ গুণ। স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। নির্বাচনী হলফনামা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সাংসদ আব্দুল মতিন ৫ বছর আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ বছরে ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা পেতেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে মাত্র ৪০ হাজার টাকা ছিল। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ৪০ হাজার টাকার বৈদ্যুতিক সামগ্রী এবং ৪০ হাজার টাকার আসবাব সামগ্রী ছিল। যৌথ মালিকানায় ছিল ৫ একর স্থাবর সম্পদ। দশম সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় পেশা উল্লেখ করেছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এবার নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিনি পেশা ‘কৃষি’ উল্লেখ করেছেন।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ৬০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩ টাকা নগদ রয়েছে। ব্যাংকে জমা আছে ৪৫ লাখ ১৯ হাজার ৪০৩ টাকা। তার ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি এবং ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের আরেকটি ‘নোহা’ গাড়ি রয়েছে। স্ত্রীর নামে ১১৮ তোলা স্বর্ণালংকার, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের বৈদ্যুতিকসামগ্রী ও ৭০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবসামগ্রী রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
Advertisement
অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে নিজের নামে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ১২৪ শতক কৃষি জমি, ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের ৩৩ শতক অকৃষি জমি আছে। সাংসদ হওয়ার আগে তার কোনো গাড়ি ছিল না কিন্তু এখন তিনি দুটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক।
এ বিষয়ে আব্দুল মতিন জানান, আমার কোনো অবৈধ আয় নেই। সাংসদ হিসেবে যে সম্মানী এবং বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ সুবিধা পেয়েছি সেটাই আমার সম্পদ বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
অপরদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য দাখিলকৃত হলফনামা অনুসারে, আব্দুস শহীদের মোট স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৮ হাজার ৫৩০ টাকার। ২০০৮ সালে তার মোট স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭০৭ টাকা, যা ১০ বছরের ব্যবধানে সাড়ে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১০ বছর আগে স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ না থাকলেও ২০১৮-তে স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৩১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৮৭ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দাখিল করা হলফনামা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
Advertisement
আব্দস শহীদ পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাজনীতি, কৃষি এবং ব্যবসা। গত ১০ বছরে সম্পদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ষিক আয় আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালে তার আয় ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
বর্তমানে বার্ষিক আয় ৬৫ লাখ ২ হাজার ১৫৮ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে সংসদের এমপি এবং চাকরি থেকে দেখিয়েছেন ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৭ টাকা। বাকি আয় দেখিয়েছেন কৃষি, বাড়ি ভাড়া, শেয়ার এবং গ্লোবাল লিংক লিমিটেড খাত।
২০০৮ সালে স্ত্রীর কোনো আয় না থাকলেও বর্তমানে স্ত্রীর আয় দেখিয়েছেন ৯৪ হাজার ৭১৩ টাকা। একই বছর তার স্থাবর সম্পদ ছিল ২০ লাখ ৪ হাজার ৫০ টাকার, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ১১ হাজার ১৫০ টাকায়। স্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ গুণ। এর মধ্যে রয়েছে ৮টি অ্যাপার্টমেন্ট।
শহীদের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০ বছর আগে ছিল ৬৬ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৭ টাকা মূল্যের। বর্তমানে প্রায় ৫ গুণ বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৭ হাজার ৩৮০ টাকা। ১০ বছর আগে দুটি গাড়ি বাবদ দেখিয়েছেন ৫০ লাখ ২ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে গাড়ি বাবদ (কয়টি গাড়ি উল্লেখ নেই) দেখিয়েছেন ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা।
১০ বছর আগে নগত টাকা ছিল ১১ লাখ ৮৬ লাখ ৭৫৫ টাকা। বর্তমানে তা প্রায় ৫ গুণ বেড়ে ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৫ টাকা।
এ বিষয়ে আব্দস শহীদ এমপি জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে সব মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমারও পেয়েছে। তিনি বলেন, সঠিকভাবে আয় উপার্জন করতে যে বুদ্ধি এবং জ্ঞানের প্রয়োজন হয় আল্লাহ তা আমাকে দিয়েছেন। তবে এটা বলতে পারি আমার কোনো অবৈধ আয় নেই, যা আছে সব বৈধ।
রিপন দে/এসআর/জেআইএম