জাতীয়

ধর্মঘটে অচল চট্টগ্রাম বন্দর

পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে গত ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরুর পর রোববার থেকে আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোনো আমদানি পণ্য বের হতে পারেনি। একইভাবে বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি কোনো রফতানি পণ্য। এতে বন্দরের ভেতরে ও বাইরে আটকা পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার।

Advertisement

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে সরকার কোনো ধরনের সমঝোতা করতে না পারায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ধর্মঘটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রফতানিপণ্য জাহাজে তুলতে না পারলে কনটেইনার বন্দরে রেখেই জেটি ত্যাগ করবে। ফলে যথাসময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্ডার বাতিলও হয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো স্বাভাবিক রয়েছে। তবে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পণ্য খালাস দেয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বন্দরে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল (রোববার) সকাল আটটা থেকে বন্ধ হয়ে যায় পণ্যপরিবহন। পণ্য নিতে কোনো গাড়ি বন্দরের ভেতরে যায়নি। পণ্য নিয়ে আসা কোনো গাড়িও বন্দরে প্রবেশ করেনি।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের সিংহভাগ আমদানি-রফতানি পণ্যই সড়কপথে পরিবহন করা হয়। এ কারণে পরিবহন ধর্মঘট হলে বন্দরের পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা দেখা দেয়। আমদানি- রফতানি পণ্য আনা-নেয়া করতে প্রতিদিন বন্দরে প্রায় ৫-৭ হাজার ট্রাক-কাভার্ড-ট্রেইলার প্রবেশ করে। প্রতিদিন ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার কনটেইনার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আনা-নেয়া হয়। বন্দর থেকে আমদানিপণ্য খালাস হয় কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও কনটেইনারবাহী গাড়িতে। এছাড়া বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হয় তার ৯০ শতাংশই বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা ১৭টি আইসিডি হয়ে বন্দরে নিয়ে জাহাজীকরণ করা হয়।

Advertisement

বাংলাদেশের রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের প্রায় ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথমে ফিডার জাহাজে করে সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা বা মালয়েশিয়ার কোনো বন্দরে নেয়া হয়। এরপর সেখানে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজে (মাদার ভেসেল) তুলে দেয়া হয়। মূলত বড় জাহাজই বাংলাদেশি রফতানি পণ্য ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো বন্দরে নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান জানান, শুধুমাত্র রোববারের শিডিউল হিসেবে রফতানি পণ্যবোঝাই এক হাজার ৮০০ টিইউইএস কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য জেটিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অপরদিকে, বন্দর থেকে আইসিডিতে আনার কথা ছিলো এক হাজার টিইউইএস আমদানি কনটেইনার । একইভাবে আরও প্রায় দুই হাজার খালি কনটেইনার আইসিডি থেকে বন্দরে ও বন্দর থেকে আইসিডিতে পরিবহনের শিডিউল ছিল। সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার আইসিডি ও বন্দরের ভেতরে আটকা পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় জাহাজে পণ্য তুলে দিতে না পারলে ক্রেতার হাতে ওই পণ্য পৌঁছতে আরও সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। ততদিনে ক্রেতা সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা বা মালয়েশিয়া থেকে বিমানে পাঠানোর আদেশ দিতে পারে। অথবা ওই কার্যাদেশ বাতিল করতে পারে। এতে বাংলাদেশি রফতানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হবেন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সরওয়ার জানান, রোববার কয়েকটি ফিডার জাহাজের বন্দর ত্যাগ করার কথা ছিল। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে একদিন পিছিয়েছে। এর মধ্যে পণ্য তুলতে না পারলে আজ দুপুরে চলে যাবে।

Advertisement

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিত।’

এসআর/জেআইএম