ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের কারিগরি দক্ষতায় দক্ষ করে তোলার অভিপ্রায় নিয়ে কাজ শুরু করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তিন উদ্যোক্তা আবু সাঈদ আল সাগর, মো. আল-আমিন ইসলাম ও উম্মে কুলসুম পপি। এ চিন্তা থেকেই ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বিডি অ্যাসিসটেন্টের।
Advertisement
প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধু ঝরে পড়া শিক্ষার্থী নয়, কাজের সুযোগ করে দিয়েছে অন্তত ৪০ জন সার্ভিসিং অ্যাসিসটেন্টকে। বর্তমানে চারটি ক্যাটাগরিতে ২০ ধরনের সার্ভিস দিচ্ছে তারা। ঘরে বসেই ফোন করে কিংবা বিডি অ্যাসিসটেন্টের ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে সহজেই সেবাগুলো পাওয়া যাচ্ছে।
ফলে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে দূর হয়েছে সার্ভিসিং কাজে নানামুখী ভোগান্তি আর প্রতারণাও। তাই ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে সেবা দিয়ে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে বিডি অ্যাসিসটেন্ট।
আর এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বব্যাপী শিক্ষা খাতে বিডি অ্যাসিসটেন্ট জয় করেছে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ সম্মাননা। রোববার সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে এই তরুণদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
Advertisement
বেরোবির পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও বিডি অ্যাসিসটেন্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবু সায়েদ আল সাগর জাগো নিউজকে জানান বিডি অ্যাসিসটেন্টের যাত্রার কথা। তিনি বলেন, একদিন ক্যাম্পাসের সামনে চা বিতরণের কাজের ব্যস্ত এক সময়ের তুমুল মেধাবীকে দেখতে পাই। বন্ধুটির সঙ্গে চায়ের দোকানে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। নবম শ্রেণিতে থাকতে হঠাৎ বাবা মারা গেলেন, সেই থেকে সংগ্রামের শুরু বন্ধু ওমরের। পড়ালেখার পাট চুকিয়ে কখনো বাদাম বিক্রি, কখনো বাসের হেলপারের কাজ। এভাবেই এগুচ্ছে তার জীবন।
অথচ একটা সময় ছিল যখন ওমরের জীবনের স্বপ্নগুলোও ছিল রঙিন। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে সম্মানজনক একটা চাকরির। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় সেই স্বপ্নটাও থমকে গেছে একেবারে! এখন শুধুই ছুটে চলা পেটের দায়ে।
সেদিনের সেই ঘটনাটা সাগর তো বটেই নাড়া দিয়েছে তার বন্ধু আল-আমিন, পপিসহ অনেককেই। তাদের ভাবিয়ে তুলেছে কিছুই কি করার নেই ভাগ্যের যাতাকলে পিষ্ট হওয়া এমন মেধাবী তরুণদের জন্য। খানিকটা ভালো জীবন তো তাদেরও প্রাপ্য। যেই ভাবা সেই কাজ। বিডি অ্যাসিসটেন্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু মূলধনের অভাবে আমরা এগোতে পারিনি। তবে এসময় আমরা দেশে অনেকগুলো বিজনেস আইডিয়া কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করি। কয়েকটিতে আমরা সাফল্যও অর্জন করি। যেমন- বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত ‘ইউথফেস্ট ২০১৬’তে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সিঙ্গাপুর ভ্রমনের সুযোগ পাই।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ব্র্যাকের আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ছিল একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ৫ লাখ টাকাসহ ছয় মাসের ইনকিউবেশন সহায়তা পাই। তারাই বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়। ফলে ব্র্যাক থেকেই আমরা পরবর্তী সময়ে ভালো অঙ্কের একটি বিনিয়োগ পাই। এক কথায়, বিডি অ্যাসিসটেন্টকে বাস্তবে রূপ দিতে আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জের অবদান অনস্বীকার্য।
Advertisement
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বিডি অ্যাসিসটেন্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বেরোবি ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম পপি বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গের সব জেলাসহ দেশের ৩০টি জেলায় আমাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের ইচ্ছে আছে। এক্ষেত্রে অন্তত ২ শতাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীকে আমাদের কার্যক্রমে যুক্ত করতে চাই। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে সার্ভিসিং কাজের জন্য বিশ্বস্ত হয়ে উঠবে বিডি অ্যাসিসটেন্ট।
সজীব হোসাইন/এফএ/জেআইএম