আন্তর্জাতিক

আফগান শান্তি আলোচনায় চীনকে পাশে চান ‘তালেবান জনক’

আফগানিস্তানে চলমান ১৭ বছরের সংঘাত নিরসনে চীনকে বড় ধরনের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানি আলেম মাওলানা সামিউল হক; যার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন বহু তালেবান নেতা।

Advertisement

আঞ্চলিক শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেইজিংকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সামিউল। এই সামিউল ‘তালেবানদের জনক’ বলে পরিচিত। আফগান তালেবানদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। আফগান তালেবানদের বর্তমান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন।

সামিউল বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে এলে চীনকে স্বাগত জানানো হবে এবং এ অঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কোনোভাবেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।

আফগানিস্তানের অস্থিরতার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক দৃষ্টি রেখে আসছে চীন। চীনের মুসলিম উইঘুরদের তৈরি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’ অতীতে আফগানিস্তান-পাকিস্তান দু’দেশেই সক্রিয় থেকেছে। এখন এ দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সামিউল হক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা করে তবেই শান্তি আলোচনা সফল হতে পারে। তার এসব বক্তব্যে পাকিস্তানের একটা প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে। পাকিস্তান যদিও তাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হুমকি বিবেচিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে যেসব হামলা হচ্ছে সেগুলোতে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।

ইউএস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক বিষয়ক সাবেক পরিচালক জশুয়া হোয়াইটের মতে, আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় চীনের ভূমিকাকে স্বাগত জানানো উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রের। চীন সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করতে পারে তা হলো- পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্কন্নোয়নে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। এতে আফগান সরকার স্থিতিশীল হতে পারবে ও আলোচনার টেবিলে শক্ত হতে পারবে।

এর আগে যে খবর রটেছিল যে চীনা সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে, গত মাসে ওই খবর সত্য নয় বলে জানিয়েছে চীনা সরকার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক ও ত্রাণ তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন।

৮২ বছর বয়সী সামিউল ও তালেবান আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে অবৈধ মনে করে এবং তাদের কাছে শান্তি প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত হলো- দেশটি থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার। গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আফগানিস্তানে যখন তার দেশের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেন তখনও তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা উল্লেখ করেনি। এতে আফগানিস্তানের অর্ধেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা বা যুদ্ধে লিপ্ত তালেবানদের যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দেয়।

Advertisement

এমন প্রেক্ষাপটে সামিউলের কথায় বারবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টিই উঠে এসেছে।

পাকিস্তানের ছোট্ট গ্রাম আকোরা খাত্তাকে আট একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সামিউল হকের দারুল উলুম হাক্কানি মাদরাসা ‘ইউনিভার্সিটি অব জিহাদ’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এ মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা প্রায় চার হাজার। এ ছাত্রদের মধ্যে ২০০-এর বেশি আফগান ‘তালেবান’ (তালেবান একটি পশতু শব্দ যার অর্থ শিক্ষার্থী) রয়েছে। এরা সবাই ইসলামাবাদে উদ্বাস্তু হিসেবে নিবন্ধিত।

সামিউল হকের মাদরাসায় বিশাল একটি লাইব্রেরি রয়েছে, যেখানে বইয়ের সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো। এর অনেকগুলোই আল-কায়েদার সহপ্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ইউসুফ আজমের লেখা।

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হামলার সময় প্রথম সীমান্ত পেরিয়ে সামিউলের মাদরাসার ছাত্ররা আফগানিস্তানে লড়তে যান। শীতল যুদ্ধে সোভিয়েতকে হারানোর স্বপ্নে এ সময় ওই মুজাহিদিনদের নানাভাবে সাহায্য করেছিল মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।

সূত্র : ব্লুমবার্গ।

এনএফ/জেআইএম