ভ্রমণ

ঝুলন্ত সেতুতে ঝুলছে পর্যটন শিল্প!

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। কাপ্তাই হ্রদের নীল জল, আকাশ ছোঁয়া সবুজ পাহাড় মুগ্ধ করে দেয় যে কোন ভ্রমণপিপাসুকে। মনোরম রাঙ্গামাটির এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটনের উন্নয়নে নেই কোনও পরিকল্পনা। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলো নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। এতে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটি পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এক ঝুলন্ত সেতুতেই ঝুলে আছে এখানকার পর্যটন শিল্প।

Advertisement

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটিকে বলা হয় ‘মাদার ডিস্ট্রিক’। ৬১১৬.১৯ বর্গ কি.মি এলাকা নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা এটি। ‘রূপের রানি’ খ্যাত এ জেলাকে সৃষ্টিকর্তা যেন প্রাকৃতিক নানা রূপে সাজিয়ে দিয়েছেন। এ জেলায় রয়েছে ১৩টি জাতিসত্তার বসবাস। বিভিন্ন জাতিসত্তার বসবাসের ফলে রাঙ্গামাটি বিচিত্র রূপে উপস্থাপিত হয় দেশসহ বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে। এতকিছু থাকার পরও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও নানান জটিলতার কারণে পর্যটন শিল্পের মতো বৃহৎ একটি শিল্প থেকে দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি।

 

এদিকে পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত সিম্বল অব রাঙ্গামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু রয়েছে আগের মতই। ভ্রমণপিপাসু মানুষ রাঙ্গামাটির পাহাড়ে বেড়াতে এসে পাহাড় দেখে যদিও মন জুড়িয়ে যায় কিন্তু সিম্বল অব রাঙ্গামাটি দেখে হতাশ হন অনেকে। একটি সেতু দিয়ে চলছে বছরের পর বছর পর্যটন ব্যবসা। নেই তার সংস্কারের কোন অগ্রগতি কিংবা পর্যটনে নতুন কোন কিছুর উদ্যোগ।

> আরও পড়ুন- কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান যেন ধ্বংসস্তুপ 

Advertisement

রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ‘যারা এ ঝুলন্ত সেতু তৈরি করেছিলো আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন এটাকে সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই আমরা দু’তলা বিশিষ্ট নতুন ব্রিজ তৈরি এবং ব্রিজের অপর প্রান্তে শিশুপার্ক করার কথা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এছাড়া পর্যটন করপোরেশনের অডিটোরিয়ামকে সংস্কার করার বিষয়েও আমরা ভাবছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে করতে চাইলে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সবকিছু করতে হয়। তাই সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লেগে যায়।’

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আলোকে পর্যটন শিল্প উন্নয়ন জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পর্যটনের বিকাশে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১২শ’ কোটি টাকার ডিপিপি পাঠানো হয়েছিল। এখন আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পর্যটন খাতে প্রকল্পের এ ফাইল। কিন্তু কবে এ ফাইল চূড়ান্ত হয়ে ফিরবে রাঙ্গামাটিতে তা এখনো ধোয়াশা। জানা গেছে, পর্যটন উন্নয়নের খাতে প্রকল্পের বাজেটে যা দেওয়া হয়েছে তার থেকে কমানো হয়েছে অনেকখানি।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও পর্যটন উন্নয়ন বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক অমিত চাকমা রাজু পর্যটন বিকাশে তেমন কোনো কিছুই করা হয়নি স্বীকার করে বলেন, ‘পর্যটন শিল্প পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোকে জেলা পরিষদকে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও পরিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

Advertisement

> আরও পড়ুন- তবে একলা চলো রে... 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ১২শ’ কোটি টাকার ডিপিপি দিয়েছিলাম। তারা কমিয়ে ৩শ’ কোটি টাকার ডিপিপি পাঠাতে বলেছে। আমরা সে অনুসারে ডিপিপি পাঠিয়েছি কিন্তু তা এখনো অনুমোদন হয়নি।’ এ প্রকল্প অনুমোদন হয়ে বরাদ্দ এলে পর্যটন খাত উন্নয়নে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

রাঙ্গামাটির তরুণ পর্যটন উদ্যোক্তা গরবা রেস্টুরেন্টের মালিক বাদশা ফয়সাল বলেন, ‘আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এ পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত। অনেক আশা নিয়ে এ শিল্পের সাথে সংযুক্ত হলেও পর্যটন খাতে তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পর্যটকরা। জেলা পরিষদের পর্যটন উন্নয়নে ১২শ’ কোটি টাকা প্রকল্পের স্বপ্নে কেটে গেছে কয়েক বছর। না জানি কবে সে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আগামীতে প্রতিযোগিতামূলক এ বাজারে কেমন হবে এ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি।’

রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম ছিলো পর্যটন নগরী হিসেবে রাঙ্গামাটি শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। আমি আমার সে কাজ যথাযথভাবে করার চেষ্টা করছি। এছাড়া শহরকে আরো সৌন্দর্যময় করতে ফুটপাতে টাইলস লাগানো হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। এটার জন্য প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।’

এসইউ/আরআইপি