জাতীয়

লন্ডন হয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি লন্ডন যাবেন, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। ছয়দিনের সরকারি এই সফরে ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি। একই দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তার বৈঠক করারও কথা রয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে একাধিক বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন বলে কথা রয়েছে। যাদের মধ্যে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ এবং নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায়ও যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও’র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। একই দিনে লন্ডনের স্থানীয় সময় ৩টা ৫৫ মিনিটে বিমানটি হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।

Advertisement

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। দেশটির রাজধানীতে দু’দিনের যাত্রাবিরতির পর রোববার সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের পথে লন্ডন ত্যাগ করবেন তিনি। বিমানটি ওইদিনই স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউজার্সির নিউইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা পর্ব শেষে একটি সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্রধানমন্ত্রীকে নিউইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশি আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘গেন্টাবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিবের এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করবেন।

Advertisement

পরে জাতিসংঘ সদর দফতরের ইকোসক চেম্বার’র (ইসিওএসওসি) ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস আয়োজিত ‘গেন্টাবাল কমপ্যাক্ট অন রিফ্যুজিস : এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি অ্যান্ড কোঅপারেশ’ শীর্ষক হাইলেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন।

প্রধানমন্ত্রী হোটেল গ্রান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল মধ্যাহ্নভোজন বৈঠকেও অংশ নেবেন। বিকেলে সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটেও বক্তৃতা করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। নিউইয়র্কের কনভেন কনফারেন্স সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট সামিট’-এও তার যোগদানের কথা রয়েছে।

জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুম ১১তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূতের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দফতরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় ‘মেকিং ইমপসিবল পসিবল : আনলকিং হিউম্যান পটেনশিয়াল থ্রো দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর এডুকেশন’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন।

এদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত স্বাগত সংবর্ধনায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। সংবর্ধনাটি নিউইয়র্কের লোটিতে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে হবে।

২৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিএ) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দফতরের ৩ নং কক্ষে এটির আয়োজন করবে।

সাধারণ পরিষদ ভবনের নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘের মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে জাতিসংঘের অছি পরিষদ আয়োজিত জাতিসংঘ মহাসচিবের হাই লেভেল ইভেন্ট ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ (এ ফোর পি) এ অংশ নেবেন তিনি।

২৬ সেপ্টেম্বর, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফ্যুজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একইস্থানে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ’র সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।

২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দফতরের ১২ নং কক্ষে অনুষ্ঠেয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত হাইলেভেল সাইড ইভেন্টে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দফতরে তার সভাকক্ষে বৈঠক করবেন। আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মওরারের জাতিসংঘের দ্বিপাক্ষিক সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

‘নারীর ক্ষমতায়মের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দফতরের ৩ নং কক্ষে হবে। জাতিসংঘ সদর দফতরে ইন্টার প্রেস সার্ভিসেস (আইপিএস) আয়োজিত সংবর্ধনাতেও যোগদানের কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।

এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভেনিউয়ে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন আয়োজিত বার্ষিক নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি।

অন্য বারের মতো এবারও সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার পরের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের নিউইয়র্ক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

আর বিকেলে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন শেখ হাসিনা । ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে আবুধাবী হয়ে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এফএইচএস/জেডএ/বিএ