নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ইসিতে ‘আমি পাঁচ টুকরার এক টুকরা। আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ নই, সংখ্যালঘিষ্ঠ। আমি তো গণতন্ত্রমনা মানুষ। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করলে তখন নির্ধারণ করব। তখনকার অবস্থা কি হবে, তা তো এখন বলতে পারি না।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে নির্বাচন কমিশনের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সকালে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধীতা করে এ সংক্রান্ত কমিশন বৈঠক থেকে বের হয়ে যান মাহবুব তালুকদার। বৈঠকে তিনি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বের হয়ে যান।
বৃহস্পতিবার ইভিএম ব্যবহারের আইনি বৈধতা দিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের আলোচনা হয়েছে। ইসিতে পাঁচ কমিশনের মধ্যে চারজনই ইভিএমের পক্ষে মত দেন। শুধুমাত্র মাহবুব তালুকদার এটার বিপক্ষে। তিনি বের হয়ে যাওয়ার পর অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
Advertisement
পরে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপরই মাহবুব তালুকদার সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ধরনের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ইসিতে বিরল।
মাহবুব তালুকদার জানান, ইসির ঘোষিত রোডম্যাপের বাইরে গিয়ে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে হঠাৎ করে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ায় কমিশন বৈঠক বর্জন করেছি। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য উনারা (সিইসি ও তিন নির্বাচন কমিশনার) বসে বসে আরপিও সংশোধন করবেন, আর আমি সেখানে মূর্তির মতো বসে থাকব, তা তো হয় না। এ জন্য বের হয়ে এসেছি।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সভা থেকে বেরিয়েছি, কারণ সভার কার্যপত্রে আরপিও সংশোধনের বিষয়টি ছিল। আমি মোটেও চাই না আরপিও সংশোধন হোক। আমি মনে করি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার ঠিক হবে না। কারণ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না।’
ইভিএমসহ নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ইসি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রাখতে না পারার জন্য হতাশার কথাও জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমরা তো কথা রাখতে পারছি না। আমরা বলেছিলাম সব দলের ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করব না। প্রথম থেকেই বলে আসছি, সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। রোডম্যাপের কোথাও ইভিএম নেই।’
তার বিরোধিতা সত্ত্বেও ইভিএম ব্যবহার করা হলে তিনি তখন কি করবেন সাংবাদিকদের এমনই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তখন পরিস্থিতি দেখে করণীয় ঠিক করব। কমিশনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত থাকলেও ইসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক তা চাই না। আমি বিপরীতে অবস্থান নিয়েছি। কারও বিরুদ্ধে নয়। এটা মতের বিরুদ্ধে ভিন্নমত। সিইসির বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করব না। অন্যের মতকে সাপোর্ট করতে হবে, এ ধরনের নীতিতে বিশ্বাস করি না। গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকবে।’
এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে বিধি সংশোধনের ক্ষেত্রেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।
এইচএস/এএইচ/পিআর