দেশজুড়ে

এখনও সেই শিক্ষক বাবার দায়িত্ব নেয়নি ছেলেরা

রাজশাহীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাজাহার হোসেনের দায়িত্ব এখনও নেননি তার ছেলেরা। বাবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিলে ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক।

Advertisement

প্রায় ৮ বছর ধরে মাজাহার হোসেন (৮৫) বিদ্যালয়টিতে বসবাস করছেন। রোগে ভুগে নিদারুন কষ্টে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত বারান্দায় দিন কাটছে এই বৃদ্ধের।

এ নিয়ে গত ৩ আগস্ট জাগো নিউজে ‘দুই প্রতিষ্ঠিত সন্তানের শিক্ষক বাবার রাত কাটছে স্কুলের বারান্দায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ভাইরাল হয়ে যায় সেই খবরটি। পরদিন স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমগুলো এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর থেকেই মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই।

গত রোববার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের ওই শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান মুকুলের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে তার ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান আপেলসহ স্বজনরাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

বাবার সুবিধার্থে খোলামেলা পরিবেশে নিচতলায় বাসা নিতে ছেলেদের পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। তবে এখনও বাবাকে নিয়ে যাননি ছেলেরা। এখনও বিদ্যালয়েই দিন কাটাচ্ছেন অসহায় এই বাবা।

জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, মাজাহার হোসেন শিক্ষার আলো ছড়াতে রাজশাহী স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অথচ শেষ জীবনে এসে তার মতো গুণী ব্যক্তির ঠাঁই হয়নি নিজের পরিবারেই। এ সংবাদ দেখার পরই তিনি ওই স্কুলে ছুটে গিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসারও দায়িত্ব নেয়া হয়। বাবার ভরণ পোষণের দায়িত্ব ছেলেদেরই। তারা এ দায়িত্বভার না নিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত তিনদিন ধরে মাজাহার হোসেনের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন রাজশাহী নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শিরিন আক্তার জাহান।

তিনি জানান, পেশার বাইরে মানবিক কারণে তিনি এই অসহায় ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় তার সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

Advertisement

স্বাধীনতার আগে ভারতের মালদা ছেড়ে রাজশাহীতে আসেন মাজাহার হোসেন। ওই সময় সেখানকার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন তিনি। রাজশাহীতে এসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে প্রতিষ্ঠা করেন স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে প্রায় ২৮ বছর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৮ সালের ৫ এপ্রিল তিনি অবসরে যান।

২০১০ সালের শেষ দিকে বিদ্যালয়ে এসে ওঠেন অসহায় ওই শিক্ষক। এরপর থেকেই একা সেখানেই বসবাস করে আসছেন তিনি। অসুস্থ এ শিক্ষককে দু-বেলা খাবার দিয়েই দায় সেরেছেন ছেলে।

দুই ছেলে এবং এক মেয়ের জনক মাজাহার হোসেন নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকার বাসিন্দা। সেই ভিটেতে ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান আপেল মাকে নিয়ে বসবাস করছেন। আপেল নগরীর দেবিসিংপাড়া মাদরাসার গণিতের শিক্ষক। বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান মুকুল পরিবার নিয়ে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/এমএস