জাতীয়

অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য : অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পৃথক লেন!

উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুমূর্ষু রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পৃথক লেন থাকে। অন্যান্য লেনে যানবাহনের যানজট থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সের পৃথক লেনে কেউ যান না। কিন্তু বাংলাদেশে কোথাও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পৃথক লেন নেই। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় যেন পৃথক লেনই তৈরি করলো।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি এলাকায় প্রাইভেটকারের পাশে একটি পৃথক লাইনে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা গেছে। যেন এ অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য।

ব্যস্ততম নগরী ঢাকায় হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সযোগে যাওয়ার পথে যানজটে আটকা থেকে রোগীর মৃত্যুর মতো করুণ অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ইতিহাসে যা ঘটেনি তাই করে দেখিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

নিয়ম মেনে রীতিমতো পৃথক লাইনে করে রিকশা, গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে বাস চাপায় নিহত শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হাজারো শিক্ষার্থীদের রাজপথে নেমে আসার কারণে।

Advertisement

২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষির ফলে একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী।

নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

এ ঘটনায় দিয়ার বাবা রোববারই ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনেও স্থবির হয়ে রয়েছে ঢাকা। নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে ঢাকা শহরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা।

এমন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

Advertisement

শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানিয়েছিল। দাবিগুলো হলো- দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে- থামিয়ে তাদেরকে নিতে হবে, শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।

তাদের এই দাবিগুলো যৌক্তিক উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আর এমন পরিস্থিতির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নথি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। বুধবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম এ তথ্য জানান।

এমইউ/জেডএ/জেআইএম