টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী গরুহাট উন্নয়নে তদারকি, রক্ষণাবেক্ষণ ও স্থায়ী ইজারা না দেয়ায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এ হাটটি। অথচ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি এ গো-হাট। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
Advertisement
জানা গেছে, টাঙ্গাইল শহর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ৩১ কিলোমিটার, ভূঞাপুর উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার এবং বঙ্গবন্ধুসেতু থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে যমুনার কোল ঘেঁষে এ হাটের অবস্থান। গোবিন্দাসীতে সপ্তাহের রোবি ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। তবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিনই গরু কেনা-বেচা হয়।
সিলেট, রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ছাড়াও ভারত থেকে হাজার হাজার গরুর সমাগম ঘটে এ হাটে। গরুর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গোবিন্দাসী গো-হাট। গোবিন্দাসীসহ এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এ হাট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষাটের দশকে গোবিন্দাসীতে ছোট আকারে একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এটি ছোট বাজারই ছিল। ১৯৯১ সালের প্রথম দিকে সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বৃহস্পতিবার হাট বসানো হয়। সেসময় সাধারণত বিকেলে হাট বসতো।
Advertisement
১৯৯৫ সালে সরকারিভাবে গোবিন্দাসী হাটের প্রথম ইজারা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা গোবিন্দাসী হাটটি মাত্র ৩২ হাজার টাকায় ইজারা নেন। ইজারার টাকা ওঠাতে তিনি হাটটির ব্যাপক প্রচারণা চালান। গোবিন্দাসী হাটটিতে নদী ও স্থল পথে যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনা করে দেশের সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। ধীরে ধীরে গোবিন্দাসী গরুর হাটের প্রসারতা বাড়ে, জমে ওঠে গোবিন্দাসী গরুর হাট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বছরে পৌনে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত বাৎসরিক ইজারামূল্য হয় এ হাটের।
অথচ হাটটির কোনো নিজস্ব সম্পত্তিই নেই। ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধার নেতৃত্বে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের প্রচেষ্টায় ভূঞাপুর ফেরিঘাট সড়কের পাশে বিবিএর নিয়ন্ত্রণাধীন বঙ্গবন্ধু সেতুর অধিগ্রহণকৃত তিন সড়কের মাথায় কুকাদাইর মৌজায় স্বল্প পরিসরে গোবিন্দাসী হাট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৪২১ বাংলা সালে দুই কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার, ১৪২২ সালে দুই কোটি ৯১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৩৪ টাকা ও ১৪২৩ সালে দুই কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ২৬০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে এ হাট থেকে। ১৪২৪ সালে স্থায়ী ইজারা না দেয়ায় সরকারি খাস কালেকশনে মোট আদায় হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা আর ১৪২৫ সালের প্রথম ২৫ সপ্তাহে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৭ লাখ ৩৬ হাজার ১০০ টাকা। চলতি বছর ১২টি হাটের জন্য ৪৭ লাখ ১০ হাজার টাকায় স্থানীয় হান্নান সরকার ও মো. লিটন মন্ডলকে ইজারা দেয়া হয়েছে।
গোবিন্দাসী গরুর হাট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, স্থায়ী ইজারা না দেয়ায় একদিকে সরকার যথাযথ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে গোবিন্দাসী হাটটি অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
Advertisement
গরু নিয়ে হাটে আসা শামসুল, আহাম্মদ আলী, মোসলেম উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, তারা ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছেন না। যারা আসছেন তারাও দাম বলছেন খুবই কম। ফলে গরু বিক্রি করতে পারছেন না।
ইজারাদার মো. লিটন মন্ডল জানান, স্থায়ী ইজারা পেলে হাটে গরু-মহিষ আনায় প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু সরকারি খাস কালেকশনে তা একবারেই হয় না।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ গোবিন্দাসী হাটের তত্ত্বাবধায়ক আওয়ামী লীগ নেতা ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা জানান, তিনিই স্থানীয় লোকদের নিয়ে গোবিন্দাসী গরুর হাট প্রতিষ্ঠা করেন। মাইকিং করে, প্রণোদনা দিয়ে, বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পাইকার ও ক্রেতাদের হাটমুখো করেছেন। হাট উন্নয়নে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও সরকারি সুবিধা না পাওয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, সবার দায়িত্ব হাটটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করা। তিনি আগামীতে গোবিন্দাসী হাট স্থায়ী ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/পিআর