দেশজুড়ে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধন ৩১ জুলাই

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর গাজীপুরের প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনটি আগামীকাল ৩১ জুলাই মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হবে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স সেন্টার থেকে এর উদ্বোধন করবেন। এছাড়া একইদিন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সফল উৎক্ষেপন উদযাপন করা হবে।

Advertisement

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গাজীপুরের তেলীপাড়া এলাকার গ্রাউন্ড স্টেশন ক্যাম্পাস থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হবেন ও সরাসরি কথা বলবেন। একই সঙ্গে বেতবুনিয়ার বেক-আপ গ্রাউন্ড স্টেশনটিও উদ্বোধন করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকেই এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক মো. মেসবাহুজ্জামান জানান, স্যাটেলাইটটি নির্বিঘ্নে মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর এখন গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সংকেত দিচ্ছে ও নিচ্ছে। তাই এর থেকে কাঙ্খিত সেবা পেতে এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সার্বক্ষণিক স্যাটেলাইটটির গতিবিধি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দেয়নি। এখান থেকে ট্র্যাকিং ও কন্ট্রোলিংয়ের কাজ হচ্ছে। ফুল সিস্টেমটি টেস্টিং করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল টেস্ট ও ট্র্যাকিংয়ের কাজ সফলভাবে সমাপ্তির পর যে কোনো সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কমার্শিয়াল অপারেশনে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে।

তিনি আরও জানান, এটা হলো কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। এর গ্রাউন্ড স্টেশনে হিউজ সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। ভেতরে স্থাপিত আলাদা আলাদা ইকুইপমেন্ট ছাড়াও বাইরের পুরো সিস্টেম ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেস্ট করা হবে। বেতবুনিয়া এবং গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে যত যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়েছে যেমন অ্যান্টেনা, নেটওয়ার্ক সিস্টেমসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ছোট ছোট ভাগ করে টেস্ট করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্রাউন্ড স্টেশন ও অ্যান্টেনা টেস্ট শেষ। এখন বিভিন্ন প্রসেসে স্যাটেলাইট টেস্ট করা হচ্ছে।

Advertisement

তিনি জানান, উৎক্ষেপনের পর নির্দিষ্ট দূরত্বে দ্রাঘিমাংশে (প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে) স্যাটেলাইটটি অবস্থান করছে। ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-ইতালি থেকে স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণভাবে কন্ট্রোল করা হলেও বর্তমানে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ট্র্যাকিং এবং কন্ট্রোলিং করা হচ্ছে। প্রকৌশলীরা এখান থেকে স্যাটেলাইটে সিগন্যাল পাঠিয়ে আবার তা রিসিভ করছে। প্রয়োজন হলে সিগন্যাল পাঠিয়ে স্যাটেলাইটটিকে (১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পজিশনে) নির্দিষ্ট অবস্থানে ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করছে। নিয়মিত ট্র্যাকিং ও কন্ট্রোলিং করা হচ্ছে। ট্র্যাকিংয়ের আন্ডারে অনেক এনালাইসিস আছে। কন্ট্রোলিংয়ের সঙ্গেও অনেক বিষয় আছে। স্যাটেলাইট সিগন্যাল যেটা পাঠায় ওটা আমরা রিসিভ করি। ওই সিগন্যাল দিয়ে আমরা তা চেক করি। পরে ওই সিগন্যালের ওপর বেসিস করে আবার সিগন্যাল পাঠিয়ে স্যাটেলাইটটি কন্ট্রোল করা হয়। এখনও ফুল সিস্টেমটিকে টেস্ট করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। এভাবে ফুল টেস্ট শেষ করতে হয়ত সেপ্টেম্বর লেগে যাবে, তারপর আমরা কমার্শিয়াল অপারেশনে যাব।

ইতোমধ্যে এটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এ উপগ্রহের পরিষেবা নিতে ইতোমধ্যে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিসিএসসিএলর ৮ জুলাইয়ে চুক্তি হয়েছে। এছাড়া এর সেবা নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বিসিএসসিএল। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তারা প্রস্তাবও পেয়েছে বলে জানান তিনি।

মো. মেসবাহুজ্জামান জানান, গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটে নির্দিষ্ট পাওয়ারের একটা সিগন্যাল পাঠানো হচ্ছে, সেই সিগন্যালটি সেই পাওয়ারে আবার ফেরত আসছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এর জন্য টেস্ট ইকুপমেন্ট, ফ্রিকুয়েন্সি অ্যানালাইজার,স্পেকট্রাম অ্যানালাইজারসহ বিভিন্ন জটিল ইকুইপমেন্ট দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এসব পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। যে পরিমাণ সিগন্যাল পাঠানো হয়েছে সেই পরিমাণ সিগন্যালই ফেরত পাওয়া গেছে। বর্তমানে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে বাংলাদেশী ৩০ জন ও ফ্রান্সের ১০ জনের মত প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

কনসালটেন্ট এসএম নুসরাত দস্তগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি হলো কমিউনিকেশন সাটেলাইট। টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়াও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই-সেবা নিশ্চিত করবে। এছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-রিসার্চ, ভিডিও কনফারেন্স প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভালো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। এটির অবস্থান প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে।

Advertisement

মো. আমিনুল ইসলাম/আরএ/জেআইএম