মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত নোয়াখালীর সুধারামের আব্দুল কুদ্দুসের করা জামিন আবেদনের ওপর আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য রোববার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার সময় নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
Advertisement
শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আসামির (আব্দুল কুদ্দুস) বয়স ৮৭ বছর, তার ফোর স্টেজের ক্যান্সার। ওনি একা হাটাচলা করতে পারেন না। কারো সহযোগিতা ছাড়া চলা সম্ভব হয় না। তাই আসামির জামিন চাইছি।
জামিনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমরা অসুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল (রিপোর্ট) প্রতিবেদন চাই। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ফোর স্টেজের ক্যান্সার হলে তো উনি মারা যাবেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
Advertisement
জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। এছাড়া তাদের সঙ্গে ছিলেন মাসুদ রানা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জাগো নিউজকে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এই প্রথম কোনো আসামির জামিন আবেদন করা হয়েছে কোর্টের আপিল বিভাগে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি অসুস্থতার গ্রাউন্ডে জামিন আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলায় মোট আসামি চারজন। এর মধ্যে আব্দুল কুদ্দুসের ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং বাকি তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে আর কোনো আসামির জামিন আবেদন করা হয়নি। এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামির মামলায় আপিল বিভাগে জামিন চাওয়া হয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ওনার (আসামি) বয়স ৮৭ বছর। চার ধরনের ক্যান্সার, হুইল চেয়ার ও অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে ফিরতে পারে না। মানবিক কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ এ মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে আমির আলী, মো. জয়নাল আবদিন ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুরের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন এবং আসামি মো. আব্দুল কুদ্দুসকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। চার আসামির মধ্যে মনসুর পলাতক রয়েছেন। বাকি তিনজন কারাগারে। তারা রায় ঘোষণার দিন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
এফএইচ/আরএস/এমএস