ধর্ম

পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণই হজের আনুষ্ঠানিকতা

শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ এবং মাহরাম সাপেক্ষে নারীদের জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। হজ তার একটি।

Advertisement

হজ পালনের মাধ্যমে মানুষ নৈতিক ও আত্মিক আনুগত্যের সর্বোত্তম শিক্ষা লাভ করে। নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনও সুদৃঢ় হয়।

বিশেষ করে পরকালের কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমত লাভের প্রস্তুতি গ্রহণ করার রসদ পাওয়া যায় হজের আনুষ্ঠানিকতায়।

তাই পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের সেরা মাধ্যমও হজ। আপন-জনদের কাছ থেকে কাফন সাদৃশ দুই টুকরো সাদা কাপড় পরিধান করে আল্লাহর রাস্তায় বের হয় মুমিন মুসলমান। হৃদয়ে হজের কাজ সম্পাদনকারী লাভ করে পরকালের পাথেয় এবং শিক্ষা। যা তাকে পরকালের সফলতার পথ দেখায়।

Advertisement

সফলতার পথে হাটতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর; মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মকামে ইবরাহিমের মত সুস্পষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৬ ও ৯৭)

আল্লাহর এ নির্দেশ পালনে সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম উম্মাহ আরবি মাস জিলহজের ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পবিত্র নগরী মক্কা, আরাফা, মিনা, মুজদালিফায় মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলোতে নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করে থাকেন। আর এ নিদর্শনগুলোতে নির্ধারিত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে পূর্ণ করে হজ।

আরও পড়ুন > হজের প্রস্তুতি গ্রহণে আবশ্যক করণীয় ও বর্জনীয়

পবিত্র নগরী মক্কার এ সফরে মুসলিম উম্মাহ ৩টি ফরজ, ৫টি ওয়াজিব এবং সুনির্দিষ্ট কিছু সুন্নাত কাজ পালনের মাধ্যমে হস সম্পাদন করে থাকে। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে তৈরি হয় বান্দার একান্ত সুসম্পর্ক। হাদিসে রয়েছে হজ পালনকারীর জন্য কিছু সুসংবাদ-

Advertisement

- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমন অবস্থায় ফিরে আসে, যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রুপই হয়ে যায়।’ (বুখারি)

- হজের অর্জন সম্পর্কে নিজেদের মনে রাখতে হবে যে, আরাফাতের দিনই আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দার প্রতি (এত পরিমাণ) অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা (বড়) গোনাহ ক্ষমা করে দেন, (যা দেখে) ‘শয়তান আরাফার দিন অপেক্ষা অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না।’

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেশত ব্যতিত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।’

আল্লাহর ঘোষণার মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহ উল্লেখিত ফজিলত ও মর্যাদা লাভে পবিত্র নগরী বাইতুল্লায় এবং আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর মেহমান হয়ে তাঁর ডাকে সারা দিয়ে ‘হজ’ নামক বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে যোগদান করেন।

যাদের নিয়ত খালেস থাকে এবং যথাযথভাবে হজ সম্পাদন করে তারা সেখান থেকে হজের নৈতিক ও আত্মিক সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণী নিয়ে আল্লাহ প্রেমিক মুমিন বান্দা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। জীবনের বাকী দিনগুলো পাপ-পংকিলতা ও অনাচারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলে। চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাত লাভে নিজেদের তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।

আল্লাহর মেহমানদের মনে রাখতে হবে

মুমিন বান্দা যখন হজ পালনের নিয়ত করে; তখন থেকেই ওই বান্দা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত মেহমানে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেননা সে দুনিয়ার সব লোভ-লালসা থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরকালের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিসহ হজে গমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে যায়।

হজ আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে সব পাপ থেকে মুক্ত করতে, নিষ্পাপ মাছুম হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে সে বদ্ধপরিকর। গোনাহ মাফের মাধ্যমে সে নিজেকে উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের আলোয় আলোকিত করতে নেয় দীপ্ত শপথ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনেচ্ছু ব্যক্তিকে যথাযথভাবে হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালনের তাওফিক দান করুন।

হজের আগেই হজের করণীয় কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করার প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন। হজের জন্য দুনিয়ার যাবতীয় মোহ ও মায়া ত্যাগ করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর