বিশ্বকাপে ডেনমার্কের বিপক্ষে পেনাল্টি শ্যুটআউটে জয়লাভ করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। ঈর্ষা জাগানিয়া রাকিতিচ-মদ্রিচদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের রাতে সবার চোখ ছিল অন্য আরেকজনের দিকে। ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের উল্লাসের সময়ে এক নারীকে দেখা গেছে ক্রোয়াটদের কোচিং স্টাফদের সঙ্গে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের পর চারদিকের কোলাহল কে এই নারী?
Advertisement
ডেনমার্কের বিপক্ষে জয়ের রাতে কালো জ্যাকেট, শার্ট এবং সানগ্লাস পরে মাঠে ছিলেন তিনি। তার নাম ইভা অলিভারি। মূলতঃ খেলোয়াড়দের ভ্রমণ, দলবদল, অনুশীলন, ম্যাচ, খেলোয়াড়দের আতিথেয়তা এবং ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করাই তার কাজ। দলের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার জন্য বেশ নাম-ঢাক রয়েছে তার। ক্রোয়েশিয়ার টেকনিক্যাল স্টাফ হয়েও সবার আস্থা অর্জন করেছেন ইতোমধ্যে।
ইভার সঙ্গে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক এতটাই ভালো যে, তারা সবাই ‘আন্টি’ বলেই ডাকে তাকে। ২০১৬ সালে ইউরো কাপের পর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়রা সত্যিই অনেক ভালো। আমি তাদেরকে ভালোবাসি এবং সম্মান করি। আমাদের মধ্যে ভাই-বোনের সম্পর্ক, কারণ তাদের সবার থেকে আমি অনেক বড়। আমরা দীর্ঘদিন যাবত একসঙ্গে কাজ করে আসছি। তখন থেকে আমি আন্টি ইভা নামেই পরিচিত তাদের কাছে।’
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ডাগআউটে বসার অনুমতি পেলেও স্টেডিয়ামের সিটে বসে খেলা দেখেন ইভা। ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে ১৯৯২ সাল থেকে কাজ করে আসছেন তিনি। ডেভর সুকার ২০১২ সালে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইভাও হয়ে যান ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের ম্যানেজার।
Advertisement
বলকান যুদ্ধের পর যখন ক্রোয়েশিয়া ডেটন চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন হয়, তখন থেকে কাজ করা ইভা বলেন, ‘আমি ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রথম কাজ শুরু করি এবং তখন এ জায়গায় তেমন দক্ষতাসম্পন্ন কেউ ছিল না। তখনই আমার কাঁধে আসে এটাকে আরো উন্নত করার। ফিফা এবং উয়েফার সঙ্গে যোগাযোগ করি জাতীয় দল, ফুটসাল দল, নারী দল এবং যুব দলের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ম্যাচ আয়োজনের।’
বর্তমানে ৪৯ বছর বয়সী ইভা ৩০ বছর আগে ছিলেন পেশাদার একজন টেনিস খেলোয়াড়। ১৪ বছর বয়সে সাবেক যুগোস্লাভিয়ান ইয়ুথ নারী টেনিস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। টেনিস কিংবদন্তী স্টেফি গ্রাফকে অনুসরণ করে আসতেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ফেডারেশনে কাজ করা গুটিকয়েক সরকারী কর্মকার্তার মধ্যে তিনি একজন। উগ্র জাতীয়তাবাদের মাঝেও পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে গেছেন। ইভা বলেছিলেন, ‘আমরা ঐতিহ্যগতভাবেই একটি সম্প্রদায়ে বাস করে আসছি, যেখানে খেলাধুলাকে শুধু পুরুষদের খেলাই ভাবা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমি এটি নিয়ে ভেবে নিজেকে আরো শাণিত করার মাধ্যমেই এখানে নারীদের ভূমিকাকেও তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।’
দুই দশক ধরে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলে নিজের জীবন দিয়েও ইভার জন্য নিশ্চয় রাকিতিচ, মদ্রিচ, মানজুকিচ কিংবা পেরেসিচরা চাইবেন বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে তাকে সমৃদ্ধ করতে। ‘আন্টি ইভা’ যে সেই দিনটার জন্যেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন।
Advertisement
আরআর/আইএইচএস/পিআর