জাতীয়

এমপিওভুক্তির নীতিমালার শর্ত মানবেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা

‘সারাদেশে ২৭ হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। যথযাথ শর্ত মেনেই স্বীকৃতি মিলেছিল। অথচ বছরের পর বছর আমরা মেধা-শ্রম দিয়ে যাচ্ছি বিনা বেতনে। আর সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা সদ্য জারি হওয়া এমপিও নীতিমালা-২০১৮ মানতে রাজি নই। আগে এমপিওভুক্তি তারপরে শর্ত।’

Advertisement

জাতীয় প্রেস ক্লাবে চলা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আমরণ অনশন কর্মসূচির দ্বাদশ দিনে (শুক্রবার) আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা এসব কথা বলেন। তারা আরও বলেন, শর্ত মেনেই আমরা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলাম। এখন বেতনের জন্য নতুন করে কোনো শর্ত মানতে রাজি নই। আগে বেতন পরে শর্ত। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় শুরু করা এ আন্দোলন (আমরণ অনশন) অব্যাহত থাকবে।

অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, সারাদেশে ২০-২৫ বছর ধরে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। তারা পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ, চিকিৎসাসেবা দিতে না পেরে নিজেরাই বোঝা হয়ে গেছেন। অপরদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যদাও নেই। একটি স্বাধীন দেশে জাতি গড়ার কারিগররা সরকারের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র নীরব, মনে হচ্ছে এ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।

নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় জাগো নিউজকে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্তি কার্যকর হলে অনেক প্রতিষ্ঠান এর আওতায় পড়বে না। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তিতে কোনো গতিও হবে না। তাই তাদের মূল আপত্তিই এখন এই নীতিমালা নিয়ে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, বর্তমান নীতিমালার অধীনে এমপিওভুক্তি হলে আমরা বঞ্চিতই থেকে যাব। নীতিমালায় পাসের হার, শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ অনেক শর্তই উল্লেখ আছে। যা অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নেই। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক পুরোনো এবং বোর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। এরপরও কেন শর্ত। আমরা নতুন করে শর্ত কিংবা কোনো নিয়মের ফাঁদে পড়তে চাই না। আগে তো আমাদের বেতন দিক। আমাদের এমপিওভুক্ত করা হোক। এরপর না আমাদের উপর শর্ত দেয়াটা মানা যায়।

অনশন কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নীতিমালার কথা উল্লেখ করায় শিক্ষকরা হতাশ হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করণের জন্য কৌশলগতভাবে অন্তরায় তৈরি করেছে। এমনটি হয়তো প্রধানমন্ত্রীও অবগত নন।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী স্বীকৃতপ্রাপ্ত নন-এমপিও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তকরণের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি নীতিমালা প্রত্যাশা করছি। তাদের এমপিওভুক্তির ঘোষণা না এলে অনশন চালিয়ে যাব।

এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১০ জুন থেকে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী আজ (শুক্রবার) ২৭তম দিন এবং আমরণ অনশন কর্মসূচির ১২তম দিন। আমরণ অনশনের ১১তম দিন (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়েছেন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।

Advertisement

জেইউ/আরএস/এমএস